‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের’ পক্ষে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা। রাজধানী ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর এলাকায়, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের’ পক্ষে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা। রাজধানী ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর এলাকায়, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের’ পক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ

‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের’ পক্ষে বৃহস্পতিবারও রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা। ঘোষণা অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় এ কর্মসূচি চলবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকায় লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ হয়েছে ধানমন্ডি, রমনা, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। ঢাকার বাইরে বরিশাল, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, পঞ্চগড়, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায়ও আজ লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা।

ঢাকার ধানমন্ডিতে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি শুরু হয় আজ বেলা তিনটায়। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারাসহ সংগঠনের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এতে অংশ নেন।

ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে থেকে পান্থপথ মোড় এবং রবীন্দ্রসরোবর এলাকায় তাঁরা জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। প্রায় একই সময়ে রমনা, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও কামরাঙ্গীরচরেও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় বিকেলে লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা। সেখানে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান আলী, সংগঠক সাগুফতা বুশরা মিশমা, জোবাইরুল হাসান আরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বরিশালের টাউন হল এলাকায় জনসংযোগে নেতৃত্ব দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ও যুগ্ম সদস্যসচিব মাহমুদা আলম মিতু। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জনসংযোগে যোগ দেন।

‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের’ পক্ষে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায়

টাঙ্গাইল সদর ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগে অংশ নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এটাকে কেন্দ্র করে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা হয়। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে, হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হবে ইত্যাদি।

এমন প্রেক্ষাপটে ৩০ ডিসেম্বর রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্র প্রকাশের পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) নামে সমাবেশ করে।

ওই সমাবেশ থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে ৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা জানান, ঘোষণাপত্রের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ৬ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় জেলায় মানুষের কাছে লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ ও জনসংযোগ করা হবে। এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘ঘোষণাপত্র সপ্তাহ’। এর মধ্যে ৭ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে যে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে, তাতে জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রে সাতটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হচ্ছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করা; ঘোষণাপত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা; অভ্যুত্থানে আওয়ামী খুনি ও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করা; ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা এবং বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপ করতে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা দেওয়া।