একরাম ও মোরশেদের সঙ্গে দলের নেতাদের বিরোধ প্রকাশ্যে

সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী ও মোরশেদ আলম
ছবি-সংগৃহীত।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলের নেতাদের বিরোধ বেড়েছে। সম্প্রতি বিএনপির হরতাল-অবরোধের মধ্যে দলীয় কর্মসূচি পালনের সময় এই বিরোধ স্পষ্ট হয়েছে।

দলের নেতাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া দুই সংসদ সদস্য হলেন নোয়াখালী-৪ আসনের (সদর ও সুবর্ণচর) সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী এবং নোয়াখালী-২ আসনের (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী আংশিক) সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম। এর মধ্যে একরামুল দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন, তবে এখন দলীয় কোনো পদ নেই তাঁর। অন্যদিকে মোরশেদ আলম সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে রয়েছেন।

সম্প্রতি বিএনপির অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি শুরুর পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় শহরের চারটি স্পটে ‘শান্তি সমাবেশ’ এবং ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবিরোধী অবস্থান’ কর্মসূচি পালন করা  হচ্ছে। তবে এসব কর্মসূচিতে জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর দেখা মেলেনি। গত বুধবার থেকে তাঁর অনুসারীরা জেলা শহরের ২২টি স্থানে প্যান্ডেল তৈরি করে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন। এসব স্থানে কর্মসূচিতে অংশ নেন একরামুল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরে একরামুলের অনুসারীদের আয়োজিত কর্মসূচিতে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এ কে এম সামছুদ্দিন জেহান ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা ছিলেন না। দলের বেশির ভাগ নেতা জেলা শাখা ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নেন।

জেলা শাখার কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে পৃথক কর্মসূচি পালন করার বিষয়ে জানতে চেয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে একাধিকবার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

নিজের অনুসারীদের আয়োজন করা কর্মসূচিতে বক্তব্য দিচ্ছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। গত বুধবার শহরের সোনাপুর জিরো পয়েন্ট এলাকায়

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, দলের জেলা শাখার উদ্যোগে চারটি স্থানে কয়েক দিন ধরে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এর বাইরে কেউ কর্মসূচি পালন করেছেন কি না তাঁর জানা নেই, কেউ করে থাকলে তা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত কর্মসূচি।

একরামুল করিমের পৃথক কর্মসূচির বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী বলেন, ‘উনি তো এখন আওয়ামী লীগের না, উনি একরাম লীগ। আমরা এসব বিষয় দলের শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত করেছি। দল যা করার করবে।’

এদিকে জেলার সেনবাগ উপজেলার ছমির মুন্সিরহাট বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের বিরোধী হিসেবে পরিচিত পাঁচ নেতার অনুসারীরা এক হয়ে ‘শান্তি মিছিল’ ও সমাবেশ করেছেন। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া। সমাবেশে তিনি ছাড়াও সেনবাগ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর এবং পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ তিনজনের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপদেষ্টা জামাল উদ্দিন আহমেদ ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শিহাব উদ্দিন মিলিত হয়ে এর আগে একাধিকবার সমাবেশ করে সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের বিপক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

নোয়াখালীর সেনবাগে আয়োজিত মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন শাখার সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে

গতকাল মিছিল–পরবর্তী সমাবেশে আতাউর রহমান ভূঁইয়া সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা সারা বাংলাদেশের কোথায়ও কোনো কাঁচা রাস্তা রাখেননি। অথচ সেনবাগে এখনো কাঁচা রাস্তা। এখানে কাঁচা রাস্তা কেন থাকবে? গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগকে এলাকায় সংগঠিত ও শক্তিশালী হতে দেওয়া হয়নি। পৌর আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি নেই। যুবলীগের কোনো কমিটি নেই। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বিএনপির প্রেতাত্মা কাজ করছে।’

সেনবাগ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন মোরশেদ আলম। এ সময়ের মধ্যে উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দলাদলি ও কোন্দল প্রকট হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের এই কোন্দল নিয়ে জেলা শাখার নেতারাও উদ্বিগ্ন।

জানতে চাইলে নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম তাঁর বিরোধী হিসেবে পরিচিত পাঁচ নেতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমার কোনো দোষ তাঁরা পান না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিন মাস আগে চিঠি লিখেছেন, কোনো কাজ হয়নি। আমার কোনো বদনাম নেই, আমি সন্ত্রাসী লালন করি না। ১০ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি, এ কারণেই তাঁরা আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন।’

দুই সংসদ সদস্যের সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশের বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যখন ঐক্য জরুরি, তখন সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ জেলার নেতাদের পাশ কাটিয়ে পৃথক কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছেন। এতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিভ্রান্ত ও হতাশ হচ্ছেন। দলের স্বার্থে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।