প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রতি ক্ষমতাসীনেরা নির্লজ্জের মতো আনুগত্য প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং প্রতি বিষয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকা, বর্তমান শাসক দলের অভ্যাস।’
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘অরক্ষিত স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিহীন বিপন্ন বাংলাদেশ: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় হাফিজ উদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) যখন বিপদে পড়েন, তখন বলেন যে দিল্লি আছে আমরা আছি। এ ধরনের কথা বলতে তাদের লজ্জাবোধও হয় না।’ তিনি বলেন, ‘দিল্লি থাকলে এই সরকার আছে। প্রতিবেশী দেশের আশ্রয়ে কতখানি আনুগত্য স্বীকার করে যাচ্ছে! আমরা কি এ জন্য যুদ্ধ করেছি? বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা মানুষ কখনোই এ ধরনের গোলামি মেনে নেবে না।’
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে স্বাধীনতার মূল্যবোধকে উজ্জীবিত করা এবং স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে। এই সংগ্রামে দেশ অবশ্যই আমাদের জয়ী হতে হবে। এই সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে। কারণ, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের আদর্শ।
হাফিজ উদ্দিন আহমদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘দুঃখ লাগে ৮০ বছর বয়সে গাড়ি পোড়ানো মামলায় এই স্বাধীনতার মাসে জেলে যেতে হলো। আমি আশা করি, মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে অসম্মান করার জন্য তারা (ক্ষমতাসীনেরা) একদিন লজ্জিত হবে। অপরাধ করলে নিশ্চয়ই সাজা হবে। কিন্তু আমি এবং আলতাফ হোসেন চৌধুরী (সাবেক বিমানবাহিনীর প্রধান) জনতা ব্যাংকের গাড়ি পোড়াতে গিয়েছিলাম। সেদিন তো কোনো ঘটনাই ঘটেনি ঢাকা শহরে।’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধান রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ), তারা জনগণের ভোট পেয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে দোষের কিছু নাই। ২৪ বছর অনেক অন্যায়-অবিচার-বঞ্চনার শিকার আমরা হয়েছি। শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ন্যায্য দাবিদার ছিলেন… সেটাই তিনি চেষ্টা করেছেন… দোষের কিছুই নাই। কিন্তু তাঁর দলের অনুসারীরা প্রমাণ করে যে স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি দিয়ে গিয়েছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাঁর (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) অনেক কৃতিত্ব আছে। কিন্তু জীবন বিপন্ন করে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, এই কৃতিত্ব আপনাকে দিতে হবে। এটুকু কৃতিত্ব অন্যকে দিতে কেন এত অপারগতা? কেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানি এজেন্ট বলে প্রমাণ করতে চায়? তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।’
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে এ আলোচনা সভা হয়। মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সাহাবুদ্দিন রেজার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।