বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ভারতও এখন আর তাদের ওপর খুশি নয়: মির্জা ফখরুল

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশের অপ্রাপ্তির বিষয়গুলো উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন, অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্যের ব্যবধান কমানো—এ সুযোগ-সুবিধাগুলো নিয়ে আসতে পারেনি সরকার। ভারতও এখন আর তাদের ওপর খুশি নয়। খুশি নয় বলেই ‘নৃত্য-নৃত্যে’ ভরপুর একটা সফর দিয়েছে।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথাগুলো বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেছেন, মানুষ ভাবল হয়তোবা এবার আমাদের তিস্তার পানি বণ্টন হবে। অভিন্ন নদীগুলোর পানি আমরা পাব। তারা ভাবল সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে, বাণিজ্যের ব্যবধানগুলো কমে আসবে; আরও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসতে পারবে। এবং তারাও সে আশাই করে গিয়েছিল যে ভারত তাদের সেগুলো দিয়ে দেবে। কিন্তু ভারতও এখন আর তাদের (সরকার) ওপর খুশি নয়। খুশি নয় বলেই নৃত্য–নৃত্যে ভরপুর একটা সফর দিয়েছে। সফরটা খুব নৃত্য-নৃত্যে ভরপুর ছিল।’

গত ৭ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর সদর উপজেলায় ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি এক স্কুলছাত্র নিহত হয়।

সীমান্তে হত্যার ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যখন নাকি আমার দেশের মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, যখন আমার মাকে তাঁর সন্তান থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তখন তারা জয়পুর বিমানবন্দরে গিয়ে নাচানাচি করছে। এই দেশের মানুষ এটা ক্ষমা করবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমরা অবশ্যই আশা করি যে ভারত যেহেতু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল, এখন বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য যে সংগ্রাম, তাতেও তারা সহযোগিতা করবে। কারণ, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে আমরা সেটাই আশা করি। খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা না নিয়ে, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন না নিয়ে এখানে কেউ কখনো কিছু করতে পারবে না।’

১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনী যে ভূমিকা পালন করেছিল, বর্তমান সরকার একই ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি নারায়ণগঞ্জে বেআইনি চায়নিজ রাইফেল তাক করে তারা আমাদের শাওনকে হত্যা করেছে।’

জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমানোর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম এটাকে তামাশা বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৫৪ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে ৫ টাকা কমিয়েছে। এটা জনগণের সঙ্গে ইয়ার্কি ছাড়া আর কিছু না। অন্যদিকে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। সবকিছুর দাম বাড়ছে। তাই এদের আর সময় দেওয়া যায় না।

‘ওরা সময় চায় ভারতের কাছে’

বিএনপির মহাসচিব সমাবেশে উপস্থিত নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা কি এদের (সরকার) আর সময় দেব?’ তখন সবাই সমস্বরে না, না বললে তিনি বলেন, ‘ওরা কিন্তু সময় চায়। সময় চায় কার কাছে? বাংলাদেশের মানুষের কাছে সময় চায় না। ওই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কাছে গিয়ে বলে আমাদের আরও সময় দাও। আরেকটা টার্ম থাকতে দাও, ব্যবস্থা কর। যাতে আরও লুটপাট করতে পারি।’

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে নেতাকর্মীরা। শনিবার বিকেল, ঢাকা

মির্জা ফখরুল এই সরকারকে সরাতে নেতা-কর্মীদের ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার তাগিদ দেন।

ঢাকায় ১৬ দিনের কর্মসূচি

সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন স্থানে ১৬টি প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এর মধ্যে আগামীকাল ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তরের উত্তরা পূর্ব এলাকায়, ১২ সেপ্টেম্বর সেগুনবাগিচায়, ১৩ সেপ্টেম্বর উত্তরা পশ্চিম এলাকায়, ১৫ সেপ্টেম্বর মিরপুরের পল্লবীতে, ১৬ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্কে, ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে মোমবাতি জ্বালিয়ে ‘মৌন’ অবস্থান কর্মসূচি, ১৮ সেপ্টেম্বর জুরাইনের রেলগেটসংলগ্ন বিক্রমপুর প্লাজার পাশে, ১৯ সেপ্টেম্বর গুলশানে, ২০ সেপ্টেম্বর বাসাবো বালুর মাঠে, ২১ সেপ্টেম্বর মিরপুরে, ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, ২৩ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরে, ২৪ সেপ্টেম্বর লালবাগে, ২৫ সেপ্টেম্বর বাড্ডায়, ২৬ সেপ্টেম্বর কলাবাগান স্টাফ কোয়ার্টার মাঠে, ২৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও এলাকায় সমাবেশ হবে।

কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এরপরে দেশজুড়ে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ পর্যায়ে তিনি স্লোগান ধরে বলেন, ‘ফয়সালা হবে কোন পথে, সবাই বলেন, রাজপথে রাজপথে। টেক ব্যাক, টেক ব্যাক—সবাই বলেন, বাংলাদেশ বাংলাদেশ। খালেদা জিয়া খালেদা জিয়া, সবাই বলেন, মুক্তি চাই, মুক্তি চাই।’

বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পল্টন-মতিঝিল ও শাহজাহানপুর জোন এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন উর রশীদ।