বিএনপিকে রাজপথে ছাড় নয়, বার্তা আ.লীগের

বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচির দিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাঁচটি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে

বিরোধী দল বিএনপির গণ-অবস্থান কর্মসূচির দিন রাজধানী ঢাকায় পাঁচটি স্থানে সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। এসব সমাবেশে যদিও আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, এটা পাল্টাপাল্টি নয়। কিন্তু তাঁদের বক্তৃতা ছিল মূলত বিএনপিকে লক্ষ্য করে। বিএনপিকে রাজপথে ছাড় দেওয়া হবে না—এসব সমাবেশ থেকে ঘুরেফিরে এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা।

গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। আর বিকেলে মহানগর উত্তর সমাবেশ করেছে মিরপুরের চিড়িয়াখানা সড়কের ঈদগাহ মাঠে। দুটি সমাবেশেই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। এর বাইরে যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা সকালে ফার্মগেটে আর বিকেলে মহানগর দক্ষিণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছে। ছাত্রলীগ সমাবেশ করেছে শাহবাগে।

কর্মসূচিগুলোর ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ গত সোমবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে বুধবার অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ হবে। এরপর মঙ্গলবার রাতে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভা। একইভাবে মহানগর উত্তর প্রথমে জানিয়েছিল, বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ। পরে কর্মসূচির নামে পরিবর্তন আনে। ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মদদদাতা, বিএনপি–জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা বলা হয়।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকে বাসে, খোলা ট্রাক ও পিকআপে করে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসেন। তাঁদের ব্যানার-ফেস্টুনে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেখা যায়। সমাবেশে আসা যানবাহনগুলো সড়কে রাখার কারণে আশপাশে যানজট সৃষ্টি হয়।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমাদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করছে। আমি কোনো কোনো অনলাইনে দেখলাম যে ‘‘পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ’’। পাল্টাপাল্টি কেন? ১০ জানুয়ারি তো বিএনপির হৃদয়েও নেই, চেতনায়ও নেই। ১০ জানুয়ারি তারা কোনো দিন করেনি।’

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫৪ দল

এই সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বিএনপি ও সমমনাদের গণ-অবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে বলেন, ‘পল্টনে মোটামুটি একটা সমাবেশ হয়েছে। ১২-দলীয় জোট দেখলাম বিজয়নগরে সমাবেশ করছে, সব মিলিয়ে ২৪ জন। ৭-দলীয় জোট প্রেসক্লাবের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে, মঞ্চে ২০ জন, সামনে সাংবাদিকসহ আরও ১৫ জন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৫৪ দল আজকে একজন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টি ঘোড়ার ডিম পাড়বে ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল।’ বিরোধীদের এই আন্দোলনকে ভুয়া বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিজয় মিছিল হবে, তারেক রহমান এসে নেতৃত্ব দেবেন—এমন কথা বলেছিল। ১০ ডিসেম্বর এমনও কথা ছিল যে বেগম জিয়া জেল থেকে এসে বিজয় মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন, সরকারের পতন অনিবার্য। কী হলো? ১০ ডিসেম্বর ভুয়া, ৩০ ডিসেম্বর ভুয়া।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে এই সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ও কামরুল ইসলাম; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন প্রমুখ।

ধাক্কা দিয়ে ফেলা যাবে না

মিরপুরের সমাবেশে বক্তৃতাকালে ওবায়দুল কাদের গতকাল ময়মনসিংহ ও ফরিদপুরে বিএনপির ওপর হামলার খবরকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশ থেকে উল্টো পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। ময়মনসিংহে সমাবেশস্থলে কিছু হয়নি। তাদের দুটো বাসে পথিমধ্যে কে বা কারা দু-একটি ঢিল ছুড়েছে। বাসও ঠিক আছে, ভেতরে বিএনপিও ঠিক আছে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ধাক্কা দিয়ে পড়ে যাওয়ার দল নয়। আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিলে যে ধাক্কা দেয় সেই পড়ে যায়। গত ১০ ডিসেম্বর সেটি প্রমাণ হয়েছে। সেদিন তারা আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চেয়েছিল। আর তারা ধাক্কা দিয়ে পড়ে গিয়ে নয়াপল্টন থেকে গরুর হাটে চলে গেছে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ।

এ ছাড়া যুবলীগের আয়োজনে যে দুটি সমাবেশ হয়, এর মধ্যে ফার্মগেটের কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান প্রমুখ।