রাষ্ট্রীয় স্থাপনা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা রুখে দাঁড়াতে সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বামপন্থী সাতটি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। সেনাসমর্থিত শাসন নয়, আন্দোলনকারী শক্তিগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থনে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের কথাও বলেছে তারা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাগীব নাঈম। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পতন নিশ্চিত হয়েছে। জনগণের এই সংগ্রামী বিজয়কে আমরা কোনোভাবেই নস্যাৎ হতে দিতে পারি না। আমরা কোনোভাবেই সেনাসমর্থিত শাসন মানব না। সেনাশাসনে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে বলতে চাই, সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদের মদদপুষ্ট কোনো ব্যক্তি বা শক্তিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা হিসেবে আমরা চাই না। আমরা চাই, আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তাঁরাই থাকবেন, যাঁরা এই আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে। ছাত্র-জনতা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। আন্দোলনের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়ি-দোকানপাট-উপাসনালয়, থানাসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় স্থাপনা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা রুখে দাঁড়াতে সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না। আমরা আরও বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, সেনাপ্রধান বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক শক্তি ও গণহত্যাকারী শক্তির সঙ্গে আলোচনা করেছেন, যা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।’
প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘অবশ্যপালনীয়’ কিছু কাজের কথাও বলেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। এগুলোর মধ্যে আছে আন্দোলনকারীদের নামে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার ও আটক সব ছাত্র-জনতার মুক্তি, সব হত্যা-নির্যাতনের তদন্ত ও বিচার, ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশদাতা ও হত্যার সঙ্গে জড়িত সরকারের মন্ত্রী, পুলিশ-র্যাব-বিজিবির কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, সব হত্যার মূল নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে’ মৃত্যুর প্রকৃত হিসাব বের করা, গুম-খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ, অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা, সিনেট-সিন্ডিকেট কার্যকর এবং উপাচার্য নিয়োগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ।
এ ছাড়া গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের আরও দাবিগুলো হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোরকম একাডেমিক ও প্রশাসনিক হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করা, দেশব্যাপী শহীদ ও আহত ছাত্র-জনতার পরিবারকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া, শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা, সারা দেশে সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ উপাচার্য-প্রক্টরসহ দায়ী ব্যক্তিদের অপসারণ নিশ্চিত করা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দমন-পীড়ন নির্যাতন যেন না চলে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া, নিপীড়নমূলক সব আইন বাতিল, সব রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদসহ সব অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া উপস্থিত ছিলেন।