অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক জনাকীর্ণ সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান। এই সমাবেশে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দালাল’ বা তাঁর অন্যায়-অত্যাচারের সহযোগী ছিলেন, এমন কাউকে বিএনপি গ্রহণ করবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধানের নাম ঘোষণা হয়েছে। তিনি ফ্রান্সে আছেন, বাংলাদেশে আসবেন। এই অন্তর্বর্তী কমিটিতে আর কোনো সদস্য যাতে ঢুকতে না পারেন। শেখ হাসিনার যাঁরা দালালি করেছেন, এই দেশে অত্যাচার-অনাচার করার জন্য যাঁরা ইতিপূর্বে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের কাউকে এই অন্তর্বর্তী সরকারে রাখা যাবে না। যদি করা হয়, তাহলে তাঁরা শেখ হাসিনা বা অন্য কোনো দেশের দালালি করতে চেষ্টা করবেন।’
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিলম্ব না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাব, বিলম্ব না করে দ্রুত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন। এই সরকার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এর জন্য পূর্ণ সহযোগিতা আমরা দেব, জনগণ তাদের দেবে।’
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ছাত্র ভাইদের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমরা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। আমরা ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং কল্যাণমূলক একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই। এ ব্যাপারে আমরা ছাত্রদের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এ জন্য আমরা তাঁদের সব বক্তব্য সমর্থন করছি।’
শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ত্যাগ ও নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর আমরা সংগ্রাম করেছি। আমাদের দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের নেতা পর্যন্ত বারবার কারাগারে গেছেন। তাঁদের নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে, তাঁদের নির্যাতন করা হয়েছে, কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, প্রায় ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এবার ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে আমরা সহযোগিতা করেছি, একাত্মতা ঘোষণা করেছিলাম। এ কারণেই প্রায় ১১ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি ছাত্রদের স্যালুট করি। তাঁরা অতি অল্প সময়ের মধ্যে ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ভয়াবহ গণতন্ত্রবিনাশী, অর্থনীতিবিনাশী সরকারকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেন।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয় চক্রান্তকারীরা ছিনিয়ে নিতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, চক্রান্তকারীরা এ বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে। সেই সুযোগ যেন আমরা না দিই। এ বিজয় সুসংহত করাই হচ্ছে এখনকার কাজ।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বিভিন্ন স্থানে স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার উল্লেখ করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যারা আজ বিভিন্ন এলাকায়, শহর-বন্দরে ভাঙচুর করছে, তারা কেউ আমাদের দলের লোক নয়, তারা কেউ এই সংগ্রামের ছাত্রদের কেউ নয়। তারা দুর্বৃত্ত-দুষ্কৃতকারী এবং তাদের লোক, যারা এই দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। সজাগ থাকবেন, বারবার আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেই বিজয় যেন এবার ছিনিয়ে নিতে না পারে।’
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকে। তারা ঠিক প্রয়োজনের সময় জাতির কঠিন প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।’
যাঁরা বিএনপি করেন না, যুবদল করেন না, ছাত্রদল করেন না, রাজনীতি করেননি, তাঁরা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার কাজ শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘আমরা এটা হতে দেব না। আমরা অতন্দ্র সৈনিকের মতো প্রতিটি স্থাপনা পাহারা দেব। আপনাদের মনে আছে, যখন মেট্রোরেলে হামলা হয়, শেখ হাসিনা কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। এখন তো ভিডিও বেরিয়েছে, ওই মেট্রোরেল কোনো ছাত্র ভাঙেননি। যাঁরা এ দেশে গন্ডগোল করার চেষ্টা করছেন, যাঁরা এই দেশকে সিকিম বানানোর চেষ্টা করছেন, তাঁরাই এই অপকর্ম করেছেন।’
সব ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনেকে বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আমাদের দান করেছে। অথচ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বীকার করে না। কিন্তু এইবার বিদেশি কোনো প্রভুর সহায়তা ছাড়াই আন্দোলন সফল হয়েছে। এ দেশের জনগণ সফল করেছেন। তাই আমাদের কোনো ভয় নেই, আল্লাহ আমাদের সহায় আছেন।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।