রাজনীতিবিদেরা ঠিক হয়ে গেলে দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের শাসকেরা যদি ঠিক না হয়, তাহলে কাউকেই ঠিক করা সম্ভব নয়।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া খ্রিষ্টান চার্চে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় জামায়াতের আমির এ কথা বলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি এবং বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদেরা ঠিক হয়ে গেলে দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ ঠিক হয়ে যাবে। রাষ্ট্রের শাসকেরা যদি ঠিক না হয়, তাহলে কাউকেই ঠিক করা সম্ভব নয়। অনেক বলে এটা করিও না, ওইটা করিও না, তার কর্মীরা বলে আপনি কী করেছেন, আমি জানি না? নেতা অপরাধে লিপ্ত, সে যখন তার কর্মীকে ভালো কথা বলে, কর্মী তখন প্যাঁচার মতো হাসে।’
এ প্রসঙ্গে কারও নাম উল্লেখ না করে শফিকুর রহমান বলেন, এখনো সমাজ ও রাজনীতিতে অনেকের মধ্যে একধরনের ‘বেপরোয়া ভাব’ দেখতে পাচ্ছেন।
বাংলাদেশকে একটি অনন্য সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছোট্ট একটি দেশ। এটা একটা সাজানো ফুলের বাগান। এই বাগানে মূলত আমরা চারটা ধর্মের মানুষ বসবাস করি। আমরা মিলেমিশে বসবাস করব, এটাই আমাদের সবার চাহিদা। কিন্তু মাঝেমধ্যে কিছু হুতোমপ্যাঁচা আমাদের বাগানে ঢুকে সে ফুলকে এলোমেলো করে দিতে চায়, সৌন্দর্যকে ধ্বংস করে দিতে চায়। আমাদের পারস্পরিক যে সংহতি আছে, সেটাকে নষ্ট করতে চায়। আমরা এটাকে তীব্রভাবে ঘৃণা করি।’
নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সম্পর্কে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতাদের উদ্দেশ্যে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীদের আপনারা চিনেন। আশা করি, এ ব্যাপার সবাই একমত হবেন যে মানুষের সামনে দৃশ্যমান যেসব সামাজিক অপকর্ম আছে, এগুলোর সঙ্গে আমাদের সহকর্মীদের কোনো সম্পর্ক নাই।’ তিনি বলেন, ‘তার পরও এ কথা আমরা বলব, আমাদের ভুলভ্রান্তি আছে। ভুলভ্রান্তি হলে কেউ আমাদের ধরে দিলে তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকি এবং সংশোধন করার চেষ্টা করি। কিন্তু এ ধরনের সামাজিক কোনো অপকর্মকে আমরা কখনো প্রশ্রয় দিই না। এটাই আমাদের নীতি।’
দেশে ধর্মীয় সহিংসতাসহ কোনো সামাজিক অপরাধের সঙ্গে তাঁর দলের কেউ সম্পৃক্ত নন বলে দাবি করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে আমি একটা প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছিলাম এবং জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম যে এই দেশে ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যতগুলো ভায়োলেন্স (সহিংসতা) হয়েছে, আইদার রিলিজিয়াস অর কম্যুনাল (সেটা ধর্মীয় হোক বা সাম্প্রদায়িক)। জাতিসংঘ তার উদ্যোগে একটা অনুসন্ধান, তদন্ত করুক। বলেছিলাম, আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দেব। যদি তদন্তে উঠে আসে যে আমাদের কোনো লোক জড়িত, দোষী—বিচারের হাতে আমরা তাকে তুলে দেব। জাতিসংঘ এটা করে নাই। কেন করে নাই, হয়তো আমাদের ছোট চিঠি তাদের পছন্দ হয় নাই।’
জামায়াতের আমির একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সব শ্রেণির মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
মিরপুর ব্যাপটিস্ট চার্চের জ্যেষ্ঠ পালক রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বিশেষ অতিথি ছিলেন। বক্তব্য দেন চার্চের সহ–কোষাধ্যক্ষ ডেভিড হালদার, টমাস সিংহ, চার্চের সহ–পালক জন সরকার, পরিচালক জেমস প্রদীপ বিশ্বাস, সমীর বাড়ৈ, ডেভিড বিশ্বাস, দিলীপ সিং, আদরি বাড়ৈ সুশ্রী অধিকারী, সুতপ সিংহ প্রমুখ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিম, মিরপুর ব্যাপটিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক বাবুল কুমার সাহা, মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পালক রেভারেন্ড প্রিন্স কিরণ বাইন, সহ–সম্পাদক মনোজ বাড়ৈ, কোষাধ্যক্ষ অসিত মিত্র, ব্যাপ্টিস্ট চার্চ মহিলা কমিটির সভানেত্রী প্রভাতি ফলিয়া, সম্পাদক অনিমা বাড়ৈ।