সরকার পালিয়ে যাওয়ার ভয়ে আছে: জাফরুল্লাহ চৌধুরী

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
ফাইল ছবি

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার কঠোর সমালোচনা করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘আজ পুলিশ অকারণে (বিরোধীদের) পেটাচ্ছে। গুলি করার অধিকার তাঁদের কে দিয়েছে? মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে, রংপুরে যা হচ্ছে সেটা কি বাংলাদেশের ছবি? আর বেশি দিন সময় নেই। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা মাঠে নামুন। সরকার পালিয়ে যাওয়ার ভয়ে আছে। আজ যা হচ্ছে তা বাংলাদেশের ছবি নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে প্রতিবাদ করতে হবে। বের হয়ে দেখুন, আপনাদের জয় সুনিশ্চিত।’

শনিবার বিকেলে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মরহুম কাজী জাফর আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ভাসানী অনুসারী পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।

সরকারপ্রধানের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দেশ এভাবে চলতে পারে না। ভুল পদক্ষেপ আর অহমিকা ছেড়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলেন। আপনি তো আলোচনাকে ভয় পান। মুখে বলেন একটা, করেন আরেকটা। দেশে পরিবর্তন দরকার। কিন্তু বিদ্রোহ দরকার নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ কাজী জাফর নেই, কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। আমরা রাস্তায় নামলে ১৫ মাসের মধ্যে দেশের পরিবর্তন আসতে বাধ্য। আমরা লড়াইয়ে আছি, থাকব ইনশাআল্লাহ।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আ স ম আবদুর রব বলেন, নারায়ণগঞ্জে যুবদলের নেতা শাওনের লাশ দিতে প্রশাসনের অস্বীকৃতি আইয়ুব খানের শাসনামলকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

কাজী জাফর আহমদের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তাঁকে আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমি প্রথম বলেছিলাম, ৭২ সালের সংবিধান বুড়িগঙ্গা নয় বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া দরকার। সমাজ পরিবর্তনের পূর্ব শর্ত হলো গণতন্ত্র। মানুষ কোনো মতাদর্শ বোঝে না। তারা চায় তাদের অধিকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশের সমর্থনে ক্ষমতায় থাকার চেয়ে জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করা অনেক ভালো। সেটাই সম্মানজনক। বিদেশে গিয়ে সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের কথা বলতে না পারলে দেশে আসবেন না। মরতে হলে মরব, দাবি আদায় করেই ছাড়ব। আপনাদের থাকতে দেব না। দেশও ছাড়তে দেব না।’

জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘কাজী জাফর আহমদ ছিলেন রাজনৈতিক অঙ্গনে অনন্য। তিনি দেশের সোনালি ইতিহাসের সাক্ষী। তাঁর মতো মেধাবী রাজনীতিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল।’

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আজ যেভাবে দেশ চলছে, তা চলতে পারে না। ওরা তস্কর, ভোট চোর, লুটেরা। আমরা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করছি। আমরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে পারব।’

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার বেপরোয়া হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা সারা দিন খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছে তা কোনো বক্তব্য হতে পারে না। এবারের লড়াই ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘দেশে দৈত্যকার শাসনব্যবস্থা চলছে। আওয়ামী লীগের প্রণীত ৭২০–এর সংবিধান এই দুরবস্থায় উপনীত করেছে। বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে।’

গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক বলেন, ‘সরকার কতটা নিকৃষ্ট যে, তারা বিরোধী দলের মিছিলে গুলি করে মানুষ মারছে। আমরা দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে আছি। মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। দেশকে ছিনতাই হতে দেওয়া যাবে না।’

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও হাবিবুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জাফর) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কাজী নজরুল ইসলাম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আক্তার হোসেন ও বাবুল বিশ্বাসসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।