ভোটের ময়দানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ফিরে আসার কোনো নৈতিক অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ খুন, সাভারের আশুলিয়ায় লাশ ট্রাকে তুলে নিয়ে গিয়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে আজ সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘অনেকে বলে এরা নাকি এ দেশে রাজনীতি করতে চায়, এরা এ দেশে এসে আবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়। যারা গোটা জাতির বিরুদ্ধে এভাবে যুদ্ধ করেছে, তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? এদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই ভোটের ময়দানে ফিরে আসার। যদি তারা জনগণের ভোটে বিশ্বাসী হতো, তাহলে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালে ফেয়ার নির্বাচন দিত। তারা তা চায়নি। তারা চেয়েছে মেরেকেটে যেভাবেই হোক তাদেরই ক্ষমতায় থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দিয়েছিল উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘সে জন্যই তারা মানুষকে মেরে, আগুনে পুড়িয়ে, মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করে শেষ রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘আপাতত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এবং তার দোসরেরা তাদের কর্মের উপহার পেয়েছেন। তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তার সঙ্গী-সাথিরা পালানোর চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ চুরি করে পালিয়েছেন, আর কেউ ধরা পড়েছেন। যাঁরা পালিয়েছেন, আর যাঁরা পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন—একজন মানুষ হিসেবে যদি চিন্তা করা হয়, এর চেয়ে মৃত্যু ছিল তাঁদের জন্য শ্রেয়। রাজনীতিবিদদের জন্য পালানো মানায় না। রাজনীতি করবেন রাজকীয় মন নিয়ে। রাজনীতি করবেন প্রিয় জাতির জন্য। যদি রাজকীয় মন নিয়ে জাতির জন্যই রাজনীতি করবেন, তাহলে আপনাকে পালাতে হবে কেন।’
কে পালায়—এমন প্রশ্ন তুলে জামায়াতের আমির বলেন, চোর পালায়, ডাকাত পালায়, খুনি পালায়, লুটেরা পালায়, গুমকারী পালায়, ধর্ষক পালায়। কোনো ভালো মানুষ পালায় না। এই পলায়নের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিচারের রায় তারাই তাদের ওপর দিয়ে ফেলেছেন। আর বাকি কৃতকর্মের পাওনাটা এখন তাদের পেতে হবে, সে অপেক্ষায় জাতি উন্মুখ হয়ে আছে।’
২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের লগি-বইঠার তাণ্ডবের প্রতিবাদে’ এই আলোচনা সভা হয়। জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা এই সভার আয়োজন করে।
২৮ অক্টোবরের ঘটনার উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা জানি, এই সরকার সব বিচার সম্পন্ন করতে পারবে না। কিন্তু ফ্যাসিস্টদের বিচার তাদের শুরু করতে হবে এবং এই শুরুটা হবে ২৮ অক্টোবর থেকে। যেদিন লগি-বৈইঠার তাণ্ডবে দেশের রাজনীতি তার পথ হারিয়েছিল, সমাজ তার পথ হারিয়েছিল। ওই দিন থেকেই বিচারের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কার ও নির্বাচন দুটোই দরকার বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সংস্কার করলাম, নির্বাচন হলো না তা তো হবে না। সে জন্য নির্দিষ্ট সময় টার্গেট করে দুটোই করতে হবে।’
২৮ অক্টোবরের পেছনে তৎকালীন চারদলীয় জোটের ‘দুর্বল’ ভূমিকাকে দায়ী করেন আরেক নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, ‘তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগেই প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন লগি-বইঠা আনার জন্য। এটা খুব স্পষ্ট ছিল, উনি একটা সংঘর্ষের জন্য তার লোকদের জড়ো করছেন। একটি রাষ্ট্রের কী দায়িত্ব থাকে, যেখানে সংঘাত, সংকটের আশঙ্কা থাকে, রক্তাক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, সেখানে এ ধরনের কোনো সমাবেশকে কোনো বিজ্ঞ সরকার অ্যালাউ করতে পারে না। উচিত ছিল সেই সরকারের, হাসিনার এই সমাবেশকে নিষিদ্ধ করা। সেটাই যদি হতো, তাহলে সেদিনের এই অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য, ফ্যাসিবাদের সূচনা ভোগ করতে হতো না।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ২৮ অক্টোবরের লগি–বৈইঠার হত্যাকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’ ও ‘নির্দেশদাতা’ বলে দাবি করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, তাঁকে প্রধান আসামি করে করা মামলাকে খারিজ করে দিয়েছিল, সেই মামলা এখন পুনরুজ্জীবন করতে হবে। শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, গণ অধিকার পরিষদের রাশেদ খান, বাংলাদেশ এলডিপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম খান, আবদুল হালিম, মতিউর রহমান আকন্দ, মো. সেলিম উদ্দিন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম প্রমুখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ।