জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দলের তিনটি মনোনয়ন ফরম চেয়েছেন। এর একটি নিজের জন্য, বাকি দুটি তাঁর ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) এবং ময়মনসিংহের দলের নেতা কে আর ইসলামের জন্য। তবে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ফরমগুলো সংগ্রহ করেননি। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু) এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তবে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন। দু-এক দিনের মধ্যে এই সাক্ষাৎ হতে পারে।
গোলাম মসিহ উল্লেখ করেন, রওশন এরশাদের অনুসারী মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ বেশ কয়েকজনের মনোনয়নের বিষয় রয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরই রওশন এরশাদ নিজের ও অনুসারীদের মনোনয়নের দলীয় ফরম নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের বিরোধ অনেক পুরোনো। নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার প্রশ্নেও জাতীয় পার্টির দুই শীর্ষ নেতা বিপরীতমুখী অবস্থানে ছিলেন। দলটির সূত্রগুলো জানিয়েছে, জি এম কাদের বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে ছিলেন না। আর রওশন এরশাদ ছিলেন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে। এখন জি এম কাদেরকেও ভোটের মাঠে নামতে হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নির্বাচনের মনোনয়ন বাছাইপ্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির এই অংশ দলের সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলীয় মনোনয়ন ফরম দিতে রাজি নয়। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মসিউর রহমানকে অনেক আগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং সে জন্য তিনি দলের মনোনয়ন পেতে পারেন না। এই বিষয়টিও জাতীয় পার্টির শীর্ষ দুই নেতার বিরোধের ক্ষেত্রে একটি ইস্যু হয়েছে।
এদিকে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আজ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাঝামাঝি সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক।
মুজিবুল হক বলেন, ‘দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ গতকাল আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছিলেন। তিনি তাঁর নিজের জন্য, পুত্র সাদ এরশাদ এবং কে আর ইসলামের জন্য তিনটি মনোনয়ন ফরম চেয়েছেন। তবে সংগ্রহ করেননি।’ রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমরা তাঁর মনোনয়ন ফরম পাঠিয়ে দেব।’
আগামীকাল ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। ২৭ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। জাপার দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল শুক্রবার শেষ হয়। তবে বিভিন্ন কারণে যাঁরা ফরম তুলতে পারেননি, তাঁরা পার্টি চেয়ারম্যানের অনুমতি সাপেক্ষে আজকেও মনোনয়ন ফরম তুলতে পেরেছেন।
আজ জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের নেতৃত্বে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। বোর্ডে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু), সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেনসহ বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলায় জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জড়ো হন। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা জাপার সভাপতি আলিফ হোসেন সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী৷ তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছে, যেমন কেন নির্বাচন করতে চাই, মাঠের পরিস্থিতি, মনোনয়ন দেওয়া না হলে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করব কি না, এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
গত সোমবার থেকে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার ছিল ফরম বিক্রির শেষ দিন। তবে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমার সময় বাড়ানো হয়। এই সময়েও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, রওশন এরশাদের জন্য কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি বলেন, মনোনয়ন ফরম তাঁর বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।