আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে সরকার নতুন একাধিক দলকে মাঠে নামিয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে। বিএনপির নেতাদের একটা অংশকে বের করে এনে ভোটে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তৎপরতাও জোরদার করেছে আওয়ামী লীগ।
এ পটভূমিতে আজ বুধবার নতুন নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি নতুন নেতা-কর্মীদের যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে ঔৎসুক্যের সৃষ্টি করেছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন।
তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু নামসর্বস্ব ভুঁইফোড় দলের নেতাও রয়েছেন। তবে বিএনপিসহ অন্য কোনো দলের কেন্দ্রীয়, পদধারী, সুপরিচিত বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা নতুন এ দলে যোগদান করেননি। যদিও তৃণমূল বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
অন্য দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের তৃণমূল বিএনপিতে যোগ না দেওয়া এবং সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী কারা হবেন—প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগদান অনুষ্ঠান শেষে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তাকিয়ে দেখেন কী কী হয়, কারা কারা আসেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় যোগদান অনুষ্ঠান শুরু হয়। দলে নতুন যোগ দেওয়া নেতা-কর্মীদের রজনীগন্ধা দিয়ে বরণ করে নেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার।
শুরুতে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, টাঙ্গাইল-৫ আসনের বাসিন্দা শরিফুজ্জামান খান ও সাভার থেকে আসা আইনজীবী মাহবুব হাসান তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করেন।
এরপর বিভিন্ন সংসদীয় আসনের বাসিন্দা ও বিভিন্ন দলের কর্মী পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন। টাঙ্গাইল-৪ আসনের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম দলে যোগ দিয়ে বলেন, ‘আমি শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম। কারও প্ররোচনায় নয়, নিজের ইচ্ছায় এই দলে যোগ দিয়েছি।’
কুমিল্লা-২ আসনের বাসিন্দা মাঈনুদ্দীন নিজেকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন পার্টির মহাসচিব বলে পরিচয় দেন। বাগেরহাট-৪ আসনের আবুল বাশার চৌধুরী বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক পার্টির মহাসচিব বলে পরিচয় দেন।
নেত্রকোনা-২ আসনের মোহাম্মদ আলী ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সন্তোষ শর্মা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ফেনী-৩ আসনের খায়েজ আহমেদ ভূঁইয়া বিএনপির, আইভি সরকার জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং লস্কর হারুনুর রশীদ এলডিপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অনুষ্ঠানে জানান।
তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের প্রায় সবাই বিএনপির সমালোচনা করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, জ্বালাও–পোড়াও করে বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। উন্নয়নের মহাসড়কে আছে দেশ, এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি মূল বিরোধী দল হবে বলে তাঁদের কেউ কেউ প্রত্যাশা করেন।
কর্মী যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলের জাতীয় কাউন্সিল হয়, আজ ৮ নভেম্বর অসংখ্য নেতা–কর্মী তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করেছেন। তৃণমূল বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা অক্ষরে অক্ষরে প্রয়োগ করে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে।’
নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে প্রার্থী দেবে। জ্বালাও-পোড়াও হত্যার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। সেটা লগি-বৈঠা দিয়ে হত্যা হোক কিংবা পেট্রল বোমা দিয়ে হত্যা হোক।’
তৃণমূল বিএনপি কোনো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হবে না জানিয়ে দলের মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এটি হবে জনগণের দল। দলের প্রত্যেক সদস্য হবেন এই দলের নেতা। তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্র যাবে তৃণমূলের কাছে। তৃণমূল বিএনপি হবে বাংলাদেশের তৃণমূল কংগ্রেস।
তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়া সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় ইসি। ১৯ সেপ্টেম্বর দলের প্রথম সম্মেলন ও কাউন্সিলে আংশিক কমিটি নির্বাচন করা হয়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে নয়, দলটির নেতাদের একটা অংশকে বের করে এনে ভোটে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপরতা জোরদার করেছে আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিএনপি থেকে যাঁদের বের করে আনা সম্ভব হবে, তাঁদের সম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া কয়েকটি দলে ভেড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপির নামও রয়েছে।
যোগদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তৃণমূল বিএনপির কো-চেয়ারপারসন কে এ জাহাঙ্গীর মাজমাদার। আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আনাস আলী খান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন মেজর (অব.) শেখ হাবিবুর রহমান প্রমুখ।