ছাত্রলীগকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ উল্লেখ করে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। পাশাপাশি ‘রেড নোটিশ’ জারি করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অতি দ্রুত বাংলাদেশের মাটিতে এনে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা এসব দাবি জানান। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের ওপর বিদেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের হেনস্তা ও নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে’ এই কর্মসূচির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
কর্মসূচিতে সমাপনী বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতার মসনদ থেকে দুমড়েমুচড়ে ভারতে পালিয়ে গেলেও ষড়যন্ত্রের চাল থামাননি। নিজের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তারা প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে বিদেশের মাটিতে তাদের দোসরদের লেলিয়ে দিয়ে তারা হেনস্তা করেছে। খুনি সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতেও নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এত দিন শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, ধর্ষণ, খুনসহ নানা অপকর্ম করে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। এখনো হাসিনার মদদে তারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আপনারা দ্রুত এই ফ্যাসিবাদের দোসর ছাত্রলীগকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে রেড নোটিশ জারি করে অতি দ্রুত বাংলাদেশে মাটিতে এনে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করুন।’
এ সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদেরও দিকনির্দেশনা দেন গণেশ চন্দ্র রায়৷ তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের আচার-আচরণ, চালচলন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করবেন। হলে হলে ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না৷ হলগুলোতে ফ্যাসিবাদের দোসররা যেভাবে ছাত্রদলের ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, সেই ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না৷ আপনারা সবাই অত্যন্ত সচেতনভাবে পা ফেলবেন। কেউ যদি মনে করে, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের পতাকাতলে এসে আরাম-আয়েশে জীবনধারণ করবে, তাহলে সে বোকার স্বর্গে বাস করছে।’
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে তারা বিদেশে হেনস্তা করেছে। দেশের ভেতরেও চোরাগোপ্তা হামলা করে তারা মানুষকে আহত করছে। গত ১৫ বছর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন-নিপীড়নসহ নানা অপকর্ম করেছে। ছাত্রলীগের দোসররা এখন ছাত্রদল ও ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৩৯ জন নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে নাহিদুজ্জামান আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা দেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তারা পালিয়ে গিয়ে এখন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এই বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম হবে না।’
অবস্থান কর্মসূচির আগে বেলা দেড়টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করে ছাত্রদল। মিছিলটি দোয়েল চত্বর ও টিএসসি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। মধুর ক্যানটিনের সামনে দিয়ে ক্যাম্পাসের শ্যাডো, অপরাজেয় বাংলা ও ভিসি চত্বর ঘুরে মিছিলটি টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসে। পরে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি করা হয়।
ছাত্রদলের মিছিলে ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফ্যাসিবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘ওয়াসিম সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, প্রভৃতি বলে স্লোগান দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
এই কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা মাসুম বিল্লাহ, নাছিরউদ্দিন শাওন, আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, নূরে আলম ভূঁইয়া ইমনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক শ নেতা-কর্মী অংশ নেন।