দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে ছয় লাখ প্রচারকর্মী তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের মুখোমুখি হবেন। ভোট চাইবেন, নানা প্রশ্নের জবাব দেবেন এবং বিরোধী দলের অপপ্রচারের বিপরীতে সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষে তথ্য তুলে ধরবেন।
উদ্যোগটিকে বলা হচ্ছে ‘অফলাইন ক্যাম্পেইন’। যা ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মসূচির অংশ। এটির উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় থেকে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত এইচ টি ইমাম। কমিটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির হয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন মানুষকে বোঝাতে পারলে তাঁরা ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন। এ জন্যই তাঁরা প্রতিটি ভোটারের কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।কবির বিন আনোয়ার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ
সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার তিন দিনের মধ্যে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এইচ টি ইমামের চেয়ারে বসতে দেখা যায় কবির বিন আনোয়ারকে। তিনি এখন তাঁর পরিচয় হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে উল্লেখ করছেন।
ঘরে ঘরে ভোট চাওয়ার এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এমন একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলছেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের থেকে সারা দেশে ১২টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দল ছয়টি জেলার দায়িত্ব পালন করবে। তারা মূলত তৃণমূল থেকে মাঠ পর্যায়ের প্রচারকর্মী বাছাই করবে। এরপর তাদের প্রশিক্ষণ দেবে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা প্রশিক্ষক ও মেন্টর। সবার ওপরে থাকবেন ‘মাস্টার ট্রেইনার’। ইতিমধ্যে ২০০ জনের মতো মাস্টার ট্রেইনার বাছাই করা হয়েছে। তাদের সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
গত সোমবার ঢাকায় মাস্টার ট্রেইনারদের প্রথম ব্যাচের ১০০ জনকে নিয়ে কর্মশালা করা হয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা করেন। আরও বক্তৃতা করেন কবির বিন আনোয়ার।
নির্বাচনের আর বেশি সময় নেই। তবে ভোটের আগে তিন হাজারের মতো প্রশিক্ষণ কর্মশালা করতে চান উদ্যোক্তারা। তাই সামনের দিনগুলোয় সারা দেশে দিনে ৩০-৪০টি করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানোর প্রয়োজন হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।
মাস্টার ট্রেইনারদের জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষক ও মেন্টর তৈরির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার ময়মনসিংহ শহরের একটি মিলনায়তনে প্রথম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মাঠ পর্যায়ের কিছু প্রচারকর্মীও ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবির বিন আনোয়ার। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। আর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নেতৃত্বে দেন ‘অফলাইন ক্যাম্পেইন’–এর প্রধান ফোকাল পয়েন্ট সুফী ফারুক ইবনে আবুবকর ও সহকারী ফোকাল পয়েন্ট সৈয়দ ইমাম বাকের। আর প্রশিক্ষণ দেন মাস্টার ট্রেনইনাররা।
পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রম অন্যান্য জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে হওয়ার কথা রয়েছে। এ কার্যক্রমের নকশাটা এমন যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা প্রথমে জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষক ও মেন্টর ঠিক করবেন। তাঁরা আবার মাঠ পর্যায়ের প্রচারকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ঘরে ঘরে পাঠাবেন। মাঠ পর্যায়ের প্রচারকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারের দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটারের মুখোমুখি হয়ে মাঠ পর্যায়ের প্রচারকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য তাঁর ভাবনা কী, তা তুলে ধরবেন। তাঁরা ভোটারদের নানা প্রশ্নের জবাব দেবেন। পাশাপাশি বিরোধী দলের অপপ্রচারের পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরবেন, যা ভোটারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে বলে এই কার্যক্রমের উদ্যোক্তারা মনে করেন।
এই উদ্যোগ সমন্বয়ের জন্য একজন ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করা হয়েছে। কর্মীদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে কাজ করবে কেন্দ্রীয় কল সেন্টার। এ ছাড়া এই পুরো কর্মযজ্ঞ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সমন্বয় করবে একটি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দল।
নির্বাচনের আর বেশি সময় নেই। তবে ভোটের আগে তিন হাজারের মতো প্রশিক্ষণ কর্মশালা করতে চান উদ্যোক্তারা। তাই সামনের দিনগুলোয় সারা দেশে দিনে ৩০-৪০টি করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানোর প্রয়োজন হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।
এই উদ্যোগ সম্পর্কে কবির বিন আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন মানুষকে বোঝাতে পারলে তাঁরা ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন। এ জন্যই তাঁরা প্রতিটি ভোটারের কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, এই প্রচারের ফলে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।