ঘটনা ঘটাবো আমরা মামলা খাবে তোমরা: ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: বিএনপির ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বিরোধী শক্তিকে দমাতে সরকার গায়েবি মামলার কৌশল অবলম্বন করে। বিরোধী দলের নেতা–কর্মীদের মামলা দিয়ে ব্যস্ত রেখে নিজেদের কাজ শেষ করে নেবে ক্ষমতাসীনেরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘তাদের পুরোনো খেলা, ঘটনা ঘটাব আমরা, মামলা খাবে তোমরা।’ এ ছাড়া জানান, ঢাকার সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে। নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে আজ বুধবার রাজধানীর প্রেসক্লাবে ‘দেউলিয়াত্ব ঘোচাতে দুর্ভিক্ষের নাটক, দেশ কোন পথে’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আবার তারা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ৯৬টি মামলা হয়েছে। সাড়ে চার হাজার আসামি করা হয়েছে। আরও ১০ হাজার অজ্ঞাতনামা। তাদের পুরোনো খেলা, ঘটনা ঘটাব আমরা, মামলা খাবে তোমরা। সেই মামলার পেছনে এক মাস, দুই মাস ঝুলতে থাকবে। আদালত, জেলখানায় দৌড়াতে থাকবে। এর মধ্যে আমরা আমাদের কাজ শেষ করব।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিবার নির্বাচনের সময় এলে নতুন নতুন কৌশল আবিষ্কার করেন ক্ষমতাসীনেরা। বিএনপির আন্দোলনকে নিয়ে মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে চায় সরকার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন নাটক জঙ্গি ছিনতাই হয়ে যাওয়া। মানুষ যে দাবি তুলেছে, আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা থেকে মনোযোগ সরাতে এগুলো সব নাটক তৈরি করা হচ্ছে।

বিএনপির বিভাগীয় পর্যায়ে ঢাকার সমাবেশটাই শেষ সমাবেশ। সেই সমাবেশের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো স্থানের অনুমতি পায়নি দলটি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলেছি, যেহেতু আমরা সব সময় নয়াপল্টনে সমাবেশ করি, সেহেতু ১০ তারিখের সমাবেশও অবশ্যই নয়াপল্টনেই করব। এর জন্য ডিএমপিসহ যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের বলতে চাই, কোনো ঝামেলা না করে আমরা যেন সমাবেশ করতে পারি, সে ব্যবস্থা করবেন।’

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বড় দেউলিয়া দলে পরিণত হয়েছে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা জানান, অনেক পুরোনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ।

মুক্তিসংগ্রামের জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু সেই দল ক্ষমতায় থাকার বাসনায় জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। জনগণকে তারা এখন বুঝতে পারে না। তারা এখন সিঙ্গাপুরের চটকদার আলোতে ঘোরে, কানাডার বেগমপাড়ার নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। মালয়েশিয়ায় আরেক বাড়ি খোঁজে। তাদের চোখে আতশবাজি, যার কারণে সাধারণ মানুষের কষ্ট তারা বোঝে না। এ ছাড়া বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশে দুর্ভিক্ষ হয়।

এর কারণ, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, তাঁদের দুর্নীতি। দেশ দেউলিয়া হলে তাঁদের শাসন করতে সুবিধা হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতির জন্য বোঝা হয়ে গেছে। এই বোঝা যদি কাঁধ থেকে সরাতে না পারি, তাহলে এদের সঙ্গে আমরা সবাই ডুবে যাব।’

নাগরিক ঐক্যের এ সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন দলটির নেতা জাহিদুর রহমান। সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাদের কাছে এখন কোনো রাজনৈতিক বয়ান নেই। তারা দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর উৎসব শুরু করেছে। মানুষ এখন সরকার পতনের ঘণ্টা শুনতে চায়।  আন্দোলনের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার কথা উল্লেখ করে মান্না বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির সঙ্গে কথা বলছে। তাঁদের লক্ষ্য এক এবং একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করতে চায় বলেও জানান।

গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, কোনো দেশের অর্থনীতি কতটা মজবুত, তা বোঝা যায় সে দেশের ভিত কতটা শক্ত, তা দেখে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে, যা ধ্বংসের মুখে।

নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আখতার হোসেনসহ প্রমুখ।