ঢাকা উত্তর আ.লীগ: ৬৪ ওয়ার্ডের শীর্ষ দুই পদ চান ১ হাজার ২৪ জন

আওয়ামী লীগের লোগো
আওয়ামী লীগের লোগো

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৬৪টি ওয়ার্ডের কমিটির শীর্ষ দুই পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন হাজারো প্রার্থী।

ওয়ার্ড পর্যায়ের এ কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে ১ হাজার ২৪ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সভাপতি পদপ্রার্থী ৩৭৭ জন। ৬৪৭ জন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

থানা কমিটির ক্ষেত্রেও প্রায় একই চিত্র লক্ষণীয়। শীর্ষ দুই পদ চান শতাধিক প্রার্থী।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আওতাধীন থানার সংখ্যা ২৬। এসব থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ইতিমধ্যে ৪৮৪ জন নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সভাপতি পদপ্রার্থী ১৮৯ জন। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ২৯৫ জন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর তাঁরা দায়িত্ব পান।

ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটির শীর্ষ দুই পদে এত প্রার্থী হওয়ার কারণ কী, এমন প্রশ্নে একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতায়। স্থানীয় পর্যায়ে শীর্ষ পদ পাওয়া গেলে নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগের একটা বিষয় থাকে। তাই শীর্ষ দুই পদ পেতে বিপুলসংখ্যক নেতা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের জন্য ২০০৩ সালে সম্মেলন হয়েছিল। কিন্তু তখন অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। সম্মেলনের ১৩ বছর পর ২০১৬ সালে কেন্দ্র থেকে থানা ও ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রায় দুই দশকের মাথায় আবার সম্মেলনের মাধ্যমে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি হতে যাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬টি থানার মধ্যে মিরপুরের দারুস সালাম থানায় সর্বোচ্চ ১৫ জন সভাপতি হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে উত্তরা পূর্ব থানার সর্বোচ্চ ২৫ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে তোড়জোড় চালাচ্ছেন।

উত্তর আওয়ামী লীগের অধীন আটটি সংসদীয় আসন রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা-১৪ আসনের (শাহ আলী, দারুস সালাম ও মিরপুর) সংসদ সদস্য আগা খান মিন্টু ও ঢাকা-১৬ আসনের (পল্লবী ও রূপনগর থানা) সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা থানা কমিটির সভাপতি হতে চান।

পল্লবী থানার সভাপতি হতে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা স্থানীয় আরও সাতজনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে নগর নেতারা জানিয়েছেন।

গত ৩০ জুলাই পল্লবী থানার সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সব থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন শেষ হয়। নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ সম্মেলন শুরু হয়েছিল। এ সময়ে মহল্লাভিত্তিক ৮০২ ইউনিটের কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিষয়ে এস এম মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম ইউনিট পর্যায়ে কাউন্সিল করে তাঁরা কমিটি গঠন করেছেন। ইউনিট কমিটিতে তাঁরা ২৬ হাজার ৬৭৪ নেতাকে পদ দিয়েছেন। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করতে প্রায় ১৯ বছর পর কাউন্সিল করেছেন। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে শীর্ষ দুই পদে নেতা নির্বাচনের জন্য জমা পড়া জীবনবৃত্তান্ত তাঁরা যাচাই-বাছাই করছেন।

সম্মেলনের সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সময় একটি ওয়ার্ড বা থানাতেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়নি।

সম্মেলনের দিনই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত না করায় কমিটি গঠন নিয়ে বাণিজ্যের আশঙ্কা করছেন অনেক নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী অন্তত সাত প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলনের পর কমিটি গঠনে সময়ক্ষেপণ হলে অনেকে টাকার বিনিময়ে পদ পেতে লবিং চালান। এতে ত্যাগী নেতার শীর্ষ পদ পেতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এ জন্য মাঠপর্যায়ে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ব্যক্তিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

জানতে চাইলে শেখ বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই থানা ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। শীর্ষ পদে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ত্যাগী, এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না, সহযোগী সংগঠনে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন কি না, দখল-সন্ত্রাসের মতো অপরাধে জড়িত না থাকা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে।

কমিটিতে পদ পেতে আর্থিক লেনদেনের কয়েকটি তথ্য এসেছে বলে স্বীকার করেন শেখ বজলুর রহমান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। অভিযোগগুলো তাঁরা যাচাই করছেন। যাঁদের কারণে দলের বদনাম হয়, তাঁরা ত্যাগী হলেও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন না।