হেনা দাসের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা। রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে, ২২ নভেম্বর ২০২৪
হেনা দাসের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা। রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে, ২২ নভেম্বর ২০২৪

জন্মশতবার্ষিকীতে বক্তারা

হেনা দাসের অবদান জাতি যুগ যুগ ধরে স্মরণে রাখবে

হেনা দাসের সুদীর্ঘ জীবন লড়াই-সংগ্রামে মুখর। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষক আন্দোলন, নারী মুক্তির লড়াই, চা-শ্রমিক ও কৃষকদের অধিকার আদায়সহ নানা ধরনের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তিনি যুক্ত ছিলেন। ইতিহাসের নানা কাল পর্বে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান জাতি যুগ যুগ ধরে স্মরণ রাখবে।

আজ শুক্রবার বিপ্লবী নারীনেত্রী হেনা দাসের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেছেন। বিকেল চারটায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভার আয়োজন করে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

হেনা দাসের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়। সভার শুরুতে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী হেনা দাসের স্মরণে গণসংগীত পরিবেশন করে। এরপর হেনা দাসের জীবনী উত্থাপন করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লাকী আক্তার।

আলোচনায় সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, ‘মানবমুক্তির মহান সংগ্রামে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অবিচল ছিলেন হেনা দাস। বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক। এ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারীদের সংগ্রামী ভূমিকা রয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নারীরাও পালন করেছেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। আদর্শিক রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে হেনা দাস আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।’

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, হেনা দাস ছিলেন একজন জাতীয় নেতা। তিনি ছিলেন একজন সাচ্চা কমিউনিস্ট। যুগ যুগ ধরে তিনি প্রজন্মের বাতিঘর হয়ে থাকবেন।

মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ফওজিয়া মোসলেম বলেন, হেনা দাসের মতো বহুমুখী ধারার আন্দোলনের অনন্য নেত্রী এ দেশে খুবই কম জন্মেছেন। এ দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন তিনি। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর বিপ্লবী জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

অন্য বক্তারা বলেন, হেনা দাস ছিলেন আজন্ম এক সংগ্রামী যোদ্ধা। তিনি ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে সক্রিয় ছিলেন। সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি লড়াই-সংগ্রাম শুরু করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, রাজনীতিতে হেনা দাস সব সময় প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন। ইতিহাসের কাল পর্বে তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান জাতি যুগ যুগ ধরে স্মরণ রাখবে।

সভায় আলোচক হিসেবে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, এ এন রাশেদা, কেন্দ্রীয় সদস্য দিবালোক সিংহ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মঞ্জুশ্রী নিয়োগী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক কমরেড লুনা নূর।

১৯২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন হেনা দাস। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামসহ তাঁর জীবদ্দশায় হওয়া সব মুক্তির আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশনেরও অন্যতম সদস্য ছিলেন হেনা দাস। ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতৃত্বে। ২০০৯ সালের ২০ জুলাই ৮৫ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।