রাজধানীর নয়াপল্টনে আগামী ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করতে চেয়ে বিএনপি যে আবেদন করেছিল, ‘যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি’র কারণ দেখিয়ে তা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আজ মঙ্গলবার এ অনুমতি দিলেও ডিএমপির চিঠিতে বলা হয়েছে, এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
আজ বিএনপিকে দেওয়া চিঠিতে সমাবেশের জন্য ২৬টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে ডিএমপি। ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের পক্ষে আজ মঙ্গলবার ডিএমপির সদর দপ্তর ও প্রশাসন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে অনুমতি দেওয়া হয়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়।
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি প্রবেশগেটে আর্চওয়ে স্থাপন করতে হবে এবং সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় Vehicle Scanner/Search Mirror–এর মাধ্যমে সমাবেশস্থলে আসা সব যানবাহন তল্লাশির ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা রাখতে হবে।
৯. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কের পাশে মাইক/সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা যাবে না।
১০. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
১১. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমাবেত হওয়া যাবে না।
১২. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
১৩. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে, এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১৪. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
১৫. সমাবেশ শুরুর ২ (দুই) ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
১৬. সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়াসহ যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
১৭. পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা, রড ব্যবহার করা যাবে না।
১৮. আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৯. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
২০. উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
২১. মিছিলসহকারে সমাবেশস্থলে আসা যাবে না।
২২. পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে, মূল সড়কে কোনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না।
২৩. সমাবেশস্থলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
২৪. স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে সমাবেশ পরিচালনা করতে হবে।
২৫. উল্লিখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২৬. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।
গত ১৫ নভেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে আবেদন করেন রুহুল কবির রিজভী। ঐদিনই দলটির পক্ষ থেকে কয়েকজন নেতা ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সমাবেশ করার বিষয়ে জানান।