‘গুজব, মিথ্যাচার আর অপপ্রচার—বিএনপির হাতিয়ার’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাঁর একটি বক্তব্য নিয়ে বিএনপি নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর পর ওবায়দুল কাদের বললেন, পলিটিক্যাল হিউমারের (রাজনৈতিক রসবোধ) বিষয়বস্তুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে।
আজ বুধবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
গত সোমবার গাবতলীতে এক সমাবেশে বিএনপি নেতাদের মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠান্ডা করার কথা বলেছিলেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপির নেতারা গতকাল এর জবাবে ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টারও অভিযোগ আনেন।
বিবৃতিতে ‘ইউরেনিয়াম’সংক্রান্ত পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের বিষয়ে ইঙ্গিত করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘পলিটিক্যাল হিউমারের (রাজনৈতিক রসবোধ) বিষয়বস্তুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার মতলব পরিহার করুন। রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত মিথ্যাচারের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একের পর এক মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করে যাচ্ছেন, যা বিএনপি নেতাদের গাত্রদাহের সৃষ্টি করছে। এ কারণেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি কোনো উন্নয়ন করেনি, বরং দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকে বাংলাদেশের ললাটে টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের কালিমা লেপন করেছিল। তাই তারা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প নিয়ে ধারাবাহিকভাবে অবান্তর ও মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছেন।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকা-ইউরোপসহ পৃথিবীর উন্নত দেশে পারমাণবিক শক্তি মানবিক কল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৩২টি দেশে ৪৩৮টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। পৃথিবীর উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ আসে পারমাণবিক শক্তি থেকে। ফ্রান্সে ৭৫ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ পারমাণবিক শক্তি থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। শূন্য কার্বন নিঃসরণের কারণে এটি সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব। এ ধরনের পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন বিএনপির পছন্দ নয়। তাই তারা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিষোদ্গার করছে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, কতটা সংকীর্ণ মানসিকতার হলে বিএনপির মহাসচিবসহ অন্য নেতারা এ ধরনের মেগা প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতে পারেন! তিনি বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, তাঁদের রাজনীতির হাতিয়ার হচ্ছে গুজব, মিথ্যাচার আর অপপ্রচার। যে দলের শীর্ষ নেতা ‘জোড়াতালির পদ্মা সেতুতে কেউ উঠবে না’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন, সেই দলের মহাসচিবের পক্ষেই এ ধরনের অবান্তর কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দেওয়া সম্ভব।
আওয়ামী লীগ কখনোই হত্যার রাজনীতি করে না, দাবি করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘হত্যাকারীর দল হলো বিএনপি। বিএনপি নেতারা বিশ্বজনীন স্বীকৃত সত্যকে বিকৃত করে দেশে আজ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলব ছিলেন জিয়াউর রহমান। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান প্রহসনের সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরসহ শত শত মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা এবং সহস্রাধিক সৈনিককে হত্যা করেছিলেন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল বিএনপি।’
বাংলাদেশে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির সূচনা কারা করেছে—এই প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্য জনসভায় কবরস্থানে পাঠানোর হুমকি দেয় কারা? কারা আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর হুমকি দেয়? বিএনপির জাতীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে দাঁড়িয়ে কেন ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’ স্লোগান দেওয়া হয়? মানবিক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা নিজের হত্যাপ্রচেষ্টার ষড়যন্ত্রকারী, ফৌজদারি অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। উদার মানবিকতার এমন নজির আর কোথায় আছে?
বিএনপি জন্মগতভাবে গণতন্ত্র ও উন্নয়নবিরোধী মানসিকতা পোষণ করে দাবি করে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতিকে এগিয়ে নিতে যে সততা, দেশপ্রেম, সুদৃঢ় নেতৃত্ব ও আত্মপ্রত্যয় প্রয়োজন, এর কোনো প্রকার রাজনৈতিক চর্চা বিএনপির মধ্যে নেই। তারা ধারাবাহিকভাবে দেশের উন্নয়নবিরোধী প্রচারণা এবং অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। বিরোধী দল হিসেবে গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশিত। কিন্তু বিএনপির মতো উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ করা এবং সংকটকালে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত¯করতে মিথ্যাচার, গুজব ও অপপ্রচারের মাধ্যমে নোংরা ষড়যন্ত্রের লজ্জাকর নজির আর কোনো দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিÿকোনো দিন ক্ষমতায় গেলে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া বিএনপির জন্য নতুন কিছু নয়। শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত দেশবিরোধী অপশক্তি সর্বদাই দেশের জনগণের অমঙ্গল কামনা করে।