বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেটের অনেকে টাকা লুট করে বিদেশে ধনীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন। মেগা প্রকল্পের নামে যাঁরা টাকা লুট করেছেন, তাঁরা লাখো কোটি টাকা বিদেশে হুন্ডি করে পাচার করেছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ এসব কথা বলেন। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা ও বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ২০০৬ সালে খালেদা জিয়ার সরকার থাকাকালীন বিদ্যুতের দর ইউনিটপ্রতি ছিল ২ টাকা ৬০ পয়সা। এখন তা ১১ টাকার ওপরে। ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ডাকাতি করে অনেকে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন।
সমাবেশে বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশেই ধনী ও গরিবের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। গত ১২ বছরে এমন অবস্থা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। অনেকে দুবেলা ভাত ঠিকমতো খেতে পারছে না। মধ্যবিত্ত গরিব হয়ে গেছে। ধনীরা আরও ধনী হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ব্যাংকের সুদের হার বাড়িয়ে তারা আইএমএফকে খুশি করতে চায়। কিন্তু আইএমএফ বলেছে, তারা খুশি নয়। তারা আরও সংস্কার দেখতে চায়। তার অর্থ হচ্ছে আজকে আইএমএফও বুঝতে পেরেছে, দেশের টাকা বিদেশে চলে গেছে। এ কারণে আজ রিজার্ভ নেই। ডলারের সংকট। ব্যাংকে তারল্যের সংকট। সরকার কোনো রকমে আর ধামাচাপা দিতে পারেনি।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশে সফরে আসা ডোনাল্ড লু বলেছে, এ দেশে গণতন্ত্র নেই। অতীতে নির্বাচন হয়নি। আগামী দিনে তাঁরা সত্যিকারে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান। কেন আমেরিকা থেকে এসে বলতে হবে। কারণ, গায়ের জোরে সরকার ক্ষমতায় থেকে ভোটের ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে।
এদিকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর কথা ছিল। তবে বেলা পৌনে একটা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন। নয়াপল্টনের আশপাশের এলাকায় এসে একত্র হয়ে অনেকে মিছিল নিয়েও সমাবেশস্থলে এসেছেন। বেলা ২টা ৪০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলে পৌনে এক ঘণ্টার মতো নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের দুই দিকের সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দক্ষিণ পাশের সড়কে নেতা-কর্মীদের অবস্থানের কারণে ওই পথ হয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ ছিল।
বিকেল সোয়া চারটার দিকে সমাবেশ শেষ হলে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের দুই পাশের সড়কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কর্মদিবসে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে তাঁরা মিছিলের পথ সংক্ষেপ করেছেন।
নয়াপল্টনের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ২৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে’ দেশের মহানগর ও জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। এদিনকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে। এ প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দুর্নীতিবাজ, গণতন্ত্র হত্যাকারী, গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ২৫ জানুয়ারি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে।