আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৯ জুন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৯ জুন

আন্দোলনে সহিংসতা হলে খবর আছে, আবার খেলা হবে: ওবায়দুল কাদের

বিএনপির নতুন করে আন্দোলন শুরু করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পরিষ্কার বলে দিতে চাই, করেন আন্দোলন। তবে আন্দোলনে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে খবর আছে; খবর আছে। আবারও খেলা হবে। আমরা মাঠে আছি। মোকাবিলা করব।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ নেতা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫ বছর (প্লাটিনাম জয়ন্তী) পূর্তি উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে আজ সমাবেশ করেছে দলটি। বিএনপির এই সমাবেশের দিনেই ঢাকায় আলোচনা সভা করল আওয়ামী লীগ।

বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করলেই আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি নিচ্ছে—এ অভিযোগের ব্যাপারে সমাবেশে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে না। দলের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে সাইকেল র‍্যালি হয়েছে। তাহলে কেন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির অপবাদ দেওয়া হচ্ছে, সাংবাদিকদের কাছে এই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আগস্ট মাসের পর জেলা পর্যায়ে সমাবেশ শুরু হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেসব সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন।

সমাবেশে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, কেউ বাড়াবাড়ি করবেন না। ক্ষমতার দাপট কেউ দেখাবেন না। কাউকে ক্ষমা করা হবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণু নীতি। দুর্নীতিবাজ কারও ছাড় নেই। ক্ষমা নেই। এ সময় বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে না। কারণ তারা জাতীয়তাবাদী দুর্নীতিবাজ দল। দুর্নীতি করে তারেক রহমান হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে লন্ডনে আরাম-আয়েশে জীবন যাপন করছেন বলেও অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

বিএনপি বড় বড় কথা বললেও তাদের আন্দোলনে জোর নেই বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তাদের মুখের বিষ উগ্র। ভয়ংকর উগ্র। তাদের আন্দোলনে দুই কূলের গান। এই আন্দোলনে সরকার একটুও বিচলিত নয়।’

ওবায়দুল কাদেরের বলেন, ‘বিএনপিতে এখন আতঙ্কের নাম তারেক রহমান। মধ্যরাতে টেমস নদীর পাড় থেকে তাঁর (তারেক রহমান) ফরমান আসছে। একজন গেল তো আরেকজন আসলো। তারেকের এই ফরমানে মির্জা ফখরুল ও গয়েশ্বররা কোথায় যান, কেউ জানেন না। এ জন্য তারেক-বন্দনা বেড়ে গেছে।’

বিএনপির কর্মসূচির নাম এখন ‘মেড ইন লন্ডন’ বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তাদের নতুন নেতৃত্বের নাম মেড ইন লন্ডন। লন্ডনে বসে এখন কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচি কেউ মানে না, মানবে না। খেলা কিন্তু হবে, ছেড়ে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

‘ক্ষমতার জন্য দাসত্ব’

ক্ষমতার জন্য যে কারও দাসত্ব মেনে নিতে বিএনপির আপত্তি নেই, এমন মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন বিএনপির নেতারা ফুল ও মিষ্টি নিয়ে হাইকমিশনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দালালি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাত্তা পাননি। ক্ষমতার জন্য যে কারও দাসত্ব মেনে নিতে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা ভারতের বন্ধু আগেও ছিলাম, আছি, থাকব। আমাদের কোনো প্রভু নেই।

আন্দোলন করে খালেদার মুক্তি হবে না

সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা খালেদা জিয়ার কারামুক্তির প্রশ্নেও কথা বলেন। এ প্রসঙ্গে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও  সাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা দেব না। দেবেন আদালত। আদালত খালেদা জিয়ার মুক্তি দিলে আমাদের আপত্তি থাকবে না। আন্দোলন করে বা জ্বালাও-পোড়াও করে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

আদালত ও আইনি প্রক্রিয়া বাদে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য হয় আদালতে যেতে হবে, না হয় রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে। আন্দোলন করে কোনো লাভ হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মান্নাফির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

খণ্ড খণ্ড মিছিল

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা তিনটা থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে বেলা পৌনে দুইটা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আসতে থাকেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পৃথক মিছিল নিয়ে সভায় এসেছেন।

সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর এই প্রথম রাজধানীতে আলোচনা সভা করেছে আওয়ামী লীগ। একই দিনে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি।