আজ বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে লক্ষণীয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চান দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
মানুষের ‘ভোটাধিকার’ আদায়ের লক্ষ্যে আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। রাজধানীর ১২টি জায়গা থেকে যুগপৎভাবে একই ঘোষণা দেবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট, এলডিপি, গণ অধিকার পরিষদ, গণফোরাম, এবি পার্টিসহ ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোট।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদল এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারির সফরের মধ্যেই আজ বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে এই সমাবেশ হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনের ‘যৌথ ঘোষণা’ ও ‘এক দফার’ যাত্রার দিনটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করতে সমাবেশে লক্ষণীয় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চান দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ঢাকা মহানগরের বাইরে এই সমাবেশে সাভার, কেরানীগঞ্জ, দোহার, নবাবগঞ্জ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীসহ ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও নেতা–কর্মীরা সমাবেশে অংশ নেবেন। গতকালই ঢাকা মহানগর পুলিশ ২৩ শর্তে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। বহু বছর পর সমাবেশের জন্য ঢাকায় মাইকে প্রচার চালানোর সুযোগ পেয়েছে দলটি।
বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, স্মরণকালের বৃহত্তর সমাবেশ হবে নয়াপল্টনে।’
দলীয় সূত্র জানায়, লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই সমাবেশের পরিকল্পনা এবং সব সাংগঠনিক প্রস্তুতি সভা তদারকি করেন। সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতাদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন।
‘নির্বাচন হয়নি, হয় না’
নয়াপল্টনের সমাবেশের আগের দিন গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন তোলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা বাংলাদেশে আসেন কেন? অন্য দেশে তো তাঁরা যান না। নিজেই প্রশ্ন তুলে নিজেই এর জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, কারণ এখানে (বাংলাদেশে) গণতন্ত্র নেই। এখানে নির্বাচন হয়নি, এখানে নির্বাচন হয় না।
গতকাল সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের নারী প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল যখন এ কথা বলছিলেন, তখন তাঁর পাশে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) প্রতিনিধি ডানা এল ওল্ডস।
সরকারের পদত্যাগকে ‘এক দফা’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনের নতুন যাত্রা শুরু করতে শরিক দলগুলোর সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছে।আবদুল আউয়াল মিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি
বিদেশিদের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল অনুষ্ঠানে আরও বলেন, ‘আজকে কথা হচ্ছে, কেন বিদেশিরা আসছেন। আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) আমেরিকা থেকে একটা টিম আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে একটা টিম এসেছে। কেন এসেছে, এই কথাটা বোঝা গেল যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। তাঁরা এখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে জানতে এসেছেন এবং তাঁরা বুঝতে চান।’
ডিআইয়ের সহযোগিতায় এই কর্মশালায় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ২৬ জন নারীনেত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, রাশেদা বেগম, প্রশিক্ষণ সেলের সদস্য রেহানা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গ পাল্টা কর্মসূচি
গত সোমবার রাতে মগবাজার এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে একজন আহত হন। এ ঘটনার উল্লেখ করে ডিআইয়ের কর্মশালায় মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (সরকার) আবারও ইচ্ছা করেই গোটা দেশকে, জাতিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা করা হচ্ছে, যারা সব সময় দোষারোপ করতে চায় যে বিরোধী দল বিএনপি এসব কাজ করে, তারা আজকে এই কাজগুলো করছে। মূলত সরকার তাদের যে বিভিন্ন সংস্থা আছে, তাদের দিয়ে এগুলো করাচ্ছে।
বিএনপির পাল্টা আওয়ামী লীগের সমাবেশের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি, কর্মসূচি চলছে। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘শান্তি সমাবেশ’, ‘শান্তি মিছিল’ নামে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে তারা, যা সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।’
‘বলিষ্ঠ’ আহ্বানের সময় এসেছে
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি গতকাল গুলশানের কার্যালয়ে নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যজোটের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে।
গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যুগপৎ আন্দোলনের এ পর্যায়ে জাতির সামনে একটি ‘বলিষ্ঠ আহ্বান’ জানানোর সময় এসেছে।
যুগপৎভাবে এক দফার ঘোষণার কথা উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ১২ তারিখের পরে আমরা আরও উচ্চতর গতিতে, আরও বেশি তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে সফলতার দিকে এগিয়ে যাব। আগামীকাল (আজ বুধবার) সেই উপলক্ষে একটা যৌথ ঘোষণা দেব। এই ঘোষণার পরে জাতি আশান্বিত হবে, উজ্জীবিত হবে।’
১২টি জায়গা থেকে ৩৭টি দলের ঘোষণা
বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আজ বিকেলে প্রায় কাছাকাছি সময়ে ঢাকার ১২টি জায়গা থেকে সরকার হটানোর এক দফার ঘোষণা দেবে ৩৭টি রাজনৈতিক দল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র মেরামতে কী কী পদক্ষেপ নেবে, সেই ঘোষণাও দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে, ১২–দলীয় জোট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) তেজগাঁওয়ে দলীয় কার্যালয়ে, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আরামবাগে, গণ অধিকার পরিষদ (নূর) কালভার্ট রোডের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, অপর অংশ জাতীয় প্রেসক্লাবে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট ও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্রেসক্লাবের সামনে, লেবার পার্টি নয়াপল্টনে দলটির কার্যালয়ে আজ এক দফার ঘোষণা দেবে। এ ছাড়া একই সময়ে বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এক দফার প্রতি সমর্থন জানাবে আমার বাংলাদেশ পার্টিও (এবি পার্টি)।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে সবাই সরকারের পদত্যাগকে ‘এক দফা’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনের নতুন যাত্রা শুরু করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এক দফার সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক রূপান্তরের রূপরেখাও ঘোষণা হতে পারে।