পল্টনে মোটামুটি সমাবেশ, বিজয়নগরে ১২ দলের সমাবেশে উপস্থিত ২৪ জন: কাদের

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ওবায়দুল কাদের
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলন ভুয়া। আজকের খবর জানেন, পল্টনে মোটামুটি একটা সমাবেশ হয়েছে। ১২–দলীয় জোট দেখলাম বিজয়নগরে সমাবেশ করছে, সব মিলিয়ে ২৪ জন। ৭–দলীয় জোট প্রেসক্লাবের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে, মঞ্চে ২০ জন, সামনে সাংবাদিকসহ আরও ১৫ জন। বেলা একটা পর্যন্ত তিন দল উপস্থিত ছিল, চার দল নেই। ৭–দলীয় ঐক্যজোট, তারপর সমমনা ১২ দল বিএনপির সমমনাদের দেখলাম। ওই এলাকাজুড়েই (পল্টন) আছে।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা বসে আছে ফুটপাতের ওপর, মঞ্চ ও শ্রোতা সেখানেই, সবাই ফুটপাতকেন্দ্রিক। তারপর এলডিপি; দেখলাম সেই দৃশ্যপট, কয়েকজন হাতে গোনা বসে আছে। ৫৪ দল আজকে একজন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টা ঘোড়ার ডিম পাড়বে, ৫৪টি ঘোড়ার ডিম পাড়বে ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। ভুয়া...ভুয়া... ভুয়া... এটা গরুর হাট।’

‘বিএনপিকে বাংলার মাটিতে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যেতে পারে না’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাষ্ট্রকে মেরামত করবে? রাষ্ট্রকে আবার ক্ষমতা পেলে তারা ধ্বংস করবে। এই দেশের গণতন্ত্র বাঁচবে না, তারা ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার আদর্শ বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রের বস্ত্রহানি ঘটবে। এই অপশক্তি জঙ্গিবাদের পৃষ্টপোষক, সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্টপোষক।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নামক এই অপশক্তির হাতে ক্ষমতা আমরা তুলে দিতে পারি না। বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কী দেখাবেন আপনারা? মুখে মিথ্যাচার আর বিষোদগার। আপনাদের নেই মেট্রোরেল, নেই পদ্মা সেতু, নেই বঙ্গবন্ধু টানেল, নেই উড়াল সেতু, নেই আন্ডারপাস, নেই এক দিনে শত সেতু, কে করেছে, শেখ হাসিনা করেছেন।’

এ সময় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করছে। আমি কোনো কোনো অনলাইনে দেখলাম যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি কেন? ১০ জানুয়ারি তো বিএনপির হৃদয়েও নেই, চেতনায়ও নেই। ১০ জানুয়ারি তারা করেনি।’

ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ১০ ডিসেম্বর তো এই নগরীতে বিজয় মিছিল হবে। ১০ জানুয়ারি তো এমনও কথা ছিল যে তারেক রহমান এসে নেতৃত্ব দেবেন। ১০ ডিসেম্বর এমনও কথা ছিল যে বেগম জিয়া জেল থেকে এসে বিজয় মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন, সরকারের পতন অনিবার্য। কী হলো? ১০ ডিসেম্বর ভুয়া, ৩০ ডিসেম্বর ভুয়া।

আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘যারা স্বাধীনতাকে নিয়ে, শেখ হাসিনার উন্নয়নকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করবে, তাদের রাজপথে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে পঞ্চমবারের মতো শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করব।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে বিএনপি। তারা অনির্বাচিত সরকার চায়। তাদের প্রতিহত করা হবে। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কোনো অপশক্তির জায়গা হবে না। বিএনপির সঙ্গে দেশের জনগণ নেই, তাদের প্রত্যাখান করেছে। বিএনপি হলো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।

‘বিএনপি নতুন করে আবার দেশে বিশৃঙ্খলা করার ষড়যন্ত্র করছে’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, কোনো বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে আমরা তাদের কঠোরভাবে দমন করব।

বিএনপির লজ্জা থাকা উচিত। তারা কী করে আবার গণতন্ত্রের কথা বলে? এ স্বাধীন দেশে বিএনপি হলো সাম্প্রদায়িক দল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন আবার বিএনপি ষড়যন্ত্র শুরু করছে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, আজ বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, সেই অগ্রযাত্রায় সারা বিশ্ব যখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখনই এই দেশে যাঁরা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, যাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, যারা ২০১৩-১৪-১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, সেই অপশক্তি আবারও মাঠে নেমেছে।

বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ছাড়া মিরপুরে দুপুরের পর সমাবেশ শুরু হয়। এর বাইরে যুবলীগ ফার্মগেট ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করেছে। ছাত্রলীগ শাহবাগে সমাবেশ করে।

বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনসহ সকল কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের এসব সমাবেশ আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ, কোনও বিরোধী শক্তি আর মাথা চাড়া দিয়ে ওঠতে পারবে না। মাথা চাড়া উঠলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের আয়োজনে রাজধানীর ফার্মগেটে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব কারাগার থেকে বের হয়েছেন। তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে বলেছেন সরকারকে পতন না করে ঘরে ফিরবেন না। সরকারের পতন হবে না। কারণ এই সরকার জনগনের সরকার। এই সরকার শান্তির স্বপক্ষের সরকার, এই সরকার উন্নয়নের সরকার। এই সরকারকে পতন ঘটনো যাবে না।

আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘যারা জাতির পিতাকে হত্যা করতে পারে, যারা জাতির পিতাকে স্ব পরিবারে হত্যা করতে পারে, যারা জেল খানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করতে পারে। তারা আর যাই হোক এ দেশের মঙ্গল কামনা করতে পারে না। ওরা খুনি। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।’