দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রিকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে আওয়ামী লীগ।
আজ এই ফরম তুলতে বিনোদনজগতের অনেক অভিনেত্রীর ভিড় লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে সোহানা সাবা ও নিপুণ আক্তারও আছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র বলছে, সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দেশের ৮টি বিভাগের ১৭১টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম এক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ঢাকা বিভাগে—৫০টি। প্রথম ঘণ্টায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে—৩৪টি।
এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২২টি, খুলনা বিভাগে ১৭টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬টি, রংপুর বিভাগে ১৪টি, বরিশাল বিভাগে ১৩টি ও সিলেট বিভাগে ৫টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাধারণ আসনের মনোনয়ন ফরম বিক্রির দিনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মী, সমর্থক ও অনুসারীদের নিয়ে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন আগ্রহী প্রার্থীরা। তখন কার্যালয়ের ভেতরে ও বাইরের তিলধারণের জায়গা ছিল না। তবে সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন ফরম বিক্রিকে কেন্দ্র করে তেমন লোকসমাগম না হলেও কার্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আগ্রহী প্রার্থীরা তাঁদের কর্মী, সমর্থক ও অনুসারীদের নিয়ে এসে মনোনয়ন ফরম কিনছেন।
সরেজমিনে দেখা যায় যে মনোনয়ন ফরম বিক্রিকে কেন্দ্র করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শামিয়ানা টানানো হয়েছে। এক পথে প্রবেশ এবং অন্য পথে বের হওয়ার জন্য বাঁশ দিয়ে পথ তৈরি করা হয়েছে।
কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কার্যালয়ের ভেতরেও পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত দুজন অভিনেত্রী আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে অভিনেত্রী সোহানা সাবা নিজে এসে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। আর বেলা ১১টার দিকে মনোনয়ন ফরম নিতে আসেন অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার।
দুপুর সাড়ে ১২টায় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস।
এর আগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট বুথ থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তৃতীয় তলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়ন ফরম জমা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত লোক না এনে প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং ফটোকপির ওপর মুঠোফোন নম্বর ও সাংগঠনিক পরিচয় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি। ইতিমধ্যে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাঁদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ তাদের দলের ও স্বতন্ত্রদের মিলিয়ে ৪৮ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে। বাকি দুটি আসনে নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে জাতীয় পার্টি (জাপা)।
সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটে সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হন। দলগুলো পদের সমপরিমাণ বা একক প্রার্থী মনোনয়ন দিলে ভোটের প্রয়োজন পড়বে। সাধারণত সংরক্ষিত আসনে একক প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। অর্থাৎ নির্বাচিত আসনের সমানুপাতিক যত সংরক্ষিত আসন দলগুলো পাবে, ততজনকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে সংসদ সদস্য পদপ্রত্যাশীরা দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বাসা ও কার্যালয়ে যাচ্ছেন, তদবির করছেন। অনেকেই নিজের জীবনবৃত্তান্ত নেতাদের কাছে দিচ্ছেন। এতে দলের পদ-পদবি ও অতীতের ভূমিকা বিস্তারিত তুলে ধরছেন। সহযোগী সংগঠনের নেতারাই বেশি তৎপর বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।