‘রাষ্ট্র মেরামতে’ বিএনপির ২৭ দফা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: খন্দকার মোশাররফ হোসেন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সব নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিআরইউ মিলনায়তনে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

‘রাষ্ট্র মেরামতে’ বিএনপির দেওয়া ২৭ দফা রূপরেখা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত করার কথা বললাম ২৭টি দফার মাধ্যমে। তখন তারা (আওয়ামী লীগ) বলল, রাষ্ট্রকাঠামো তো ধ্বংস করেছে বিএনপি। দেখেন কত হাস্যাস্পদ কথা।’

আওয়ামী লীগের স্বভাবই হচ্ছে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো—এমন মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত ১৪ বছর গায়ের জোরে এরা (আ.লীগ) ক্ষমতায়। এই ১৪ বছরে যে আমাদের রাষ্ট্রকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, একটা একটা করে একটু আগেও আমি বলেছি। গণতন্ত্র, আমাদের অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, আমাদের সমাজ—সব কাঠামো ধ্বংস হয়েছে গত ১৪ বছরে। এই ধ্বংস বিএনপি কীভাবে করল, কোন সময়ে করল, আমরা চ্যালেঞ্জ করছি, আপনারা বলেন।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। বিজয়ের মাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবিতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এর আয়োজন করে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৪ বছরে রাষ্ট্রকাঠামো যদি ধ্বংস না হয়, তাহলে মেরামতের প্রশ্ন আসছে কেন? তিনি বলেন, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে জনগণ প্রস্তুত। এই সরকারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জনগণ প্রস্তুত। ঐক্যবদ্ধ গণ–আন্দোলনের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী সরকারকে হটাতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তারের পর সামনে আসা বিএনপির এই নেতা বলেন, কোনো স্বৈরাচার আপসে ছেড়ে (ক্ষমতা) যায় না। তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার) নির্বাচনের কথা বলে, কিন্তু আসলে তাদের হাতে নির্বাচন আর কেউ বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না। তাই বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অধীন জনগণ আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাদের বিদায় করতে হবে।

সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসনের অভিযোগ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর গণতান্ত্রিক দেশ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট নাম দিয়েছে আমরা নাকি হাইব্রিড। আমরা বলি হাইব্রিডও না, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার এই দেশ পরিচালনা করছে। এখন দেশের জনগণ উপলব্ধি করছে এই সরকারের অপশাসন।

অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত, গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে, মধ্যবিত্তও গরিব হয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে আজকে দেশের যে অবস্থা, এটা দুর্বিষহ। এই অবস্থার সৃষ্টির কারণ হচ্ছে শুধু আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য, গণতন্ত্রকে হত্যার করার জন্য।’

১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে দলের মহাসচিবসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, দলীয় কার্যালয় তছনছ, পুলিশের গুলিতে একজনের মৃত্যুর ঘটনার উল্লেখ করে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজকে সরকার ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে জনগণকে, ভয় পাচ্ছে বিরোধী কণ্ঠকে।

নিজেদের অপকর্মের জন্য তারা ভয়ে ভীত। তা না হলে ঢাকায় একটি সমাবেশ হবে, সে জন্য এত ধরনের কাণ্ডকারখানা, এত বর্বরোচিত আচরণ কেন করতে হবে? নিশ্চয়ই তারা ভীত।’

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আজকে দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, বাংলাদেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় পড়ে গেছে। একটা স্বাধীন দেশে রাজনীতি করার স্বাধীনতা নেই। আজকে সামাজিক ন্যায়বিচার নেই। আশা-ভরসার শেষ স্থল বিচার বিভাগকেও ধ্বংস করে দিয়েছে শুধু একটি গায়ের জোরের সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় ক্ষমতায় থাকার জন্য। আজকে এগুলো যখন আমরা বলি, যারা গায়ের জোরে সরকারে আছে, তারা বলতে চায় আমরা অপপ্রচার করি। এর কোনটা অপপ্রচার বলুন?’
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান, ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ।