জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর দেওয়া আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে এই আবেদন করেন জি এম কাদের। ১০ নভেম্বর এ আবেদনের ওপর শুনানির দিন ঠিক করেছেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন সরকার।
জাপা থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া নেতা জিয়াউল হকের করা এক মামলার শুনানি নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর জি এম কাদেরের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
আজ জি এম কাদেরের পক্ষে আদালতে লিখিতভাবে বলা হয়েছে, মামলার বিবাদী জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। হয়রানি ও সম্মানহানির উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আইনগতভাবে এই মামলা চলতে পারে না।
জি এম কাদেরের আইনজীবী আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে চেয়ারম্যান হিসেবে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই মামলা খারিজ চেয়ে আবেদন করেছেন জি এম কাদের।
জিয়াউল হক গত ৪ অক্টোবর জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। একই মামলায় দল থেকে জিয়াউল হকের বহিষ্কারাদেশকে বেআইনি ঘোষণা এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০–এর উপধারা ১(১) অবৈধ ঘোষণা চাওয়া হয়। মামলায় জি এম কাদের ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সচিব, জাপার মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদককে বিবাদী করা হয়। জিয়াউল হক জাপা দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এবং দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জি এম কাদেরের পক্ষে আদালতে বলা হয়েছে, জিয়াউল হককে আইন মেনে দলীয় পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান গত ২৩ অক্টোবর একটি মামলা করেন। শুনানি নিয়ে আদালত কেন দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জি এম কাদেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না, সে ব্যাপারে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলেছেন। ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই মামলায়ও আপত্তি দাখিল করার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছেন জি এম কাদের। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক রয়েছে আগামী ২ জানুয়ারি।
মামলায় জিয়াউল হক ও মসিউর রহমান দুজনেই দাবি করেন, জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর ছয় মাস আগে তাঁর ছোট ভাই জি এম কাদের ভুল বুঝিয়ে ‘জাতীয় পার্টির জন্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ শিরোনামে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করান। এরপর জি এম কাদের প্রথমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, পরে চেয়ারম্যান হন, যা ছিল গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। এ নিয়ে দলের ভেতরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এরশাদ ২০১৯ সালের ২২ মার্চ জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। ৪ মে পুনরায় তাঁকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন। তখন এরশাদ গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিনি স্বাভাবিক বিবেচনা প্রয়োগে সক্ষম ছিলেন না বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন জি এম কাদের। দলের গঠনতন্ত্রে এভাবে চেয়ারম্যান ঘোষণার কোনো বিধান নেই।
মামলায় মসিউর রহমান দাবি করেন, জি এম কাদের নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান দাবি করে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলন ডাকেন। এর আগে এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ১৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা কেন বেআইনি হবে না, মর্মে রুল দেন হাইকোর্ট। এটি বিচারাধীন অবস্থায় দলের কাউন্সিল করেন জি এম কাদের। সম্মেলনে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন না।