ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও জাতীয় পতাকার অবমাননার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
আজ মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি ও বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হাইকমিশনের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ভারত সরকারের প্রতি দাবি জানায় দল ও সংগঠনগুলো।
বিবৃতিদাতা দল ও সংগঠনের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণফোরাম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সিপিবির বিবৃতিতে বলা হয়, বেশ কিছুদিন ধরে ভারতের কোনো কোনো প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ও অসত্য তথ্য প্রচারে লিপ্ত রয়েছে। দলটি বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ জনগণ ও গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তিগুলোকে দুই দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানায়।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই হামলা বাংলাদেশের ওপর হামলা বলেই বিবেচনা করা যায়। সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে হামলা, ভাঙচুর এবং বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা ভিয়েনা সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বাসদের বিবৃতিতে বলা হয়, যে কোনো দেশে-বিদেশি দূতাবাসের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব সে দেশের রাষ্ট্র ও সরকারের। অথচ ভারত সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এসব ঘটনায় দুই দেশের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে পুষ্টি জোগালেও ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদে ফেলছে দুই দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নিরীহ জনগণকে।
দুই দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উসকানির ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ জাসদ। এতে বলা হয়, ভারত সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণের বদলে তাদের (ভারতের) গণমাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কথা বলে উদ্দেশ্যমূলক, সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক অপপ্রচারণা চালিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।
বিবৃতি দিয়ে হাইকমিশনে হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ)।
এবি পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতা-কর্মীরা মঙ্গলবার বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। সেখানে বক্তারা বলেছেন, হামলার মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে তারা বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না। তারা বাংলাদেশের দীর্ঘ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দেবে না।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিবৃতিতে সহকারী হাই কমিশনে হামলাকে অনাকাঙ্ক্ষিত, দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন যেকোনো দেশের নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। এর কোনো ধরনের অবমাননা সে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করার শামিল।
খেলাফত মজলিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
সহকারী হাইকমিশনে হামলা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, শুধু আগরতলা নয়, কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বাইসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশবিরোধী উগ্রবাদী তৎপরতা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ন্যাপের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব হতে হবে অবশ্যই পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে। সেখানে বড়ভাইসুলভ আচরণ কখনো কাম্য হতে পারে না।
সহকারী হাইকমিশনে হামলার এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণকে চূড়ান্ত ধৈর্য ও সম্প্রীতির পরীক্ষা দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ মন্তব্য করে।