নুরুল হক (নুর) নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে দলের জন্য নতুন স্থায়ী কার্যালয় করতে চায়। কার্যালয়ের জায়গা বা স্পেস কিনতে চাঁদা তুলছে দলটি। বিশেষ করে প্রবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
গণ অধিকার পরিষদ সূত্রে জানা যায়, নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয় কেনার বিষয়ে গত শনিবার গণ অধিকার পরিষদের (একাংশ) ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন প্রবাসী অধিকার পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে প্রবাসী অধিকার পরিষদের বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য ৩৭ লাখ টাকার অনুদান পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর বাইরে দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রায় ১০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রাজধানীর কাকরাইল, পল্টন অথবা মতিঝিলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় করতে চায় গণ অধিকার পরিষদ (নুরের নেতৃত্বাধীন অংশ)। কেন্দ্রীয় কার্যালয় কেনার বিষয়ে গত শুক্রবার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন নুরুল হক। তিনি সেখানে বলেন, দেড় থেকে দুই কোটি টাকায় পল্টন, মতিঝিল এলাকায় ভালো মাপের একটি কার্যালয় কেনা যাবে।
গণ অধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজস্ব কার্যালয় কেনার উদ্যোগ নিয়েছি। কয়েক লাখ টাকার সংস্থান হয়ে গেছে। দলের নেতা-কর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা এগিয়ে আসছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে গণ অধিকার পরিষদ নিজস্ব কার্যালয় কিনবে।’
কেন্দ্রীয় কার্যালয় কেনার জন্য শুভাকাক্ষী ও দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে টাকা তোলা হলে, সেটি নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠতে পারে। এর আগে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া নুরুল হকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ বেশ কিছু অভিযোগ করেছিলেন। রেজা কিবরিয়ার পক্ষ নেওয়া নেতারা অভিযোগ করেন, দল গঠনের পর থেকে দলের আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়নি।
এ বিষয়ে দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য দেওয়া টাকার হিসাব, অনুদানদাতার নামসহ জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নিয়ে অস্থিরতা চলছে নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন অংশ ও রেজা কিবরিয়ার অনুসারীদের মধ্যে। রাজধানীর পুরানা পল্টনের প্রিতম-জামান টাওয়ারের ছয়তলায় গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। গত বৃহস্পতিবার কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয় ভবনের মালিকপক্ষ।
ভবনটির মালিক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান। তিনি রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। দলে ভাঙনের পর রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদে আগের দুটি পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
মালিকপক্ষ তালা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন নুরুল হকসহ নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁদের পিটিয়ে বের করে দেয় পুলিশ। ঘটনার পর গণ অধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ভবনমালিক মিয়া মশিউজ্জামান। মামলায় ভাড়া না দিয়ে ১৬ মাস ধরে কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার ও সেটি দখলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বর্তমানে গণ অধিকার পরিষদের কার্যালয়টি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে প্রতিদিন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা কার্যালয়ের নিচে যাচ্ছেন।
গণ অধিকার পরিষদের (একাংশ) উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি আমরা ছাড়িনি। প্রতিদিন কার্যালয়ের নিচেই সাংগঠনিক কাজ চলছে। চুক্তিপত্র লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হবে দল।’
এর আগে ৭ জুলাই দুই দিনের মধ্যে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়তে নোটিশ দিয়েছিল ভবনের মালিকপক্ষ। গণ অধিকার পরিষদের তৎকালীন সদস্যসচিব নুরুল হক বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়। জমির মালিকের পক্ষে মো. রাশিদুল আজিম মিয়া নামের এক ব্যক্তি নোটিশটি পাঠিয়েছিলেন।