আগামী বৃহস্পতিবার যত বেশি সম্ভব লোকের জমায়েত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় ওই দিন সতর্ক পাহারার ব্যবস্থা রাখবে দলটি। এই কাজে মূল সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও দলীয় সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের এই সমাবেশের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’। আনুষ্ঠানিকভাবে মূল আয়োজক আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। তবে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদেরও অংশগ্রহণ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকদের লক্ষ্য দুই লাখ লোকের জমায়েত করা।
সমাবেশ সফল করতে গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সব সহযোগী সংগঠন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা যৌথ সভা করেন। এতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবারের সমাবেশ ও বিরোধী দলের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে নানা দিকনির্দেশনা দেন।
খবর পাচ্ছি, সীমান্ত থেকে অস্ত্র কিনছে তারা (বিএনপি)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ তাদের অস্ত্র সরবরাহের একটি ঘাঁটি। আগ্নেয়াস্ত্র এনে তারা মজুত করছে। তারা জানে, গণশক্তি জনশক্তি নয়। তারা মনে করে, অস্ত্রশক্তি হলো আসল শক্তি। যারা অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতায় আসে, তাদের প্রতি জনগণের আস্থা থাকার কথা নয়ওবায়দুল কাদের
প্রথমে দলের সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে সূচনা বক্তব্য দেন। এ সময় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খবর পাচ্ছি, সীমান্ত থেকে অস্ত্র কিনছে তারা (বিএনপি)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ তাদের অস্ত্র সরবরাহের একটি ঘাঁটি। আগ্নেয়াস্ত্র এনে তারা মজুত করছে। তারা জানে, গণশক্তি জনশক্তি নয়। তারা মনে করে, অস্ত্রশক্তি হলো আসল শক্তি। যারা অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতায় আসে, তাদের প্রতি জনগণের আস্থা থাকার কথা নয়।’
সূচনা বক্তব্যের পর সংক্ষিপ্ত রুদ্ধদ্বার সভা হয়। সেখানে উপস্থিত সূত্র জানায়, দলের সাধারণ সম্পাদকের মূল বার্তা দুটি। প্রথমত, আগামী বৃহস্পতিবার যত বেশি সম্ভব নেতা–কর্মীর সমাবেশ ঘাটাতে হবে। দ্বিতীয়ত, এখন থেকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত স্বল্প সময়ের নোটিশে বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মীকে রাজপথে নামানোর মতো প্রস্তুতি থাকতে হবে।
সূত্র জানায়, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগই বৃহস্পতিবারের সমাবেশ সফল করার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখবে। তবে ঢাকার বাইরে থেকে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা অংশ নেবেন। আর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে পাড়ায় পাড়ায় সতর্ক পাহারায় থাকতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি কোথাও সমস্যা তৈরি করলে তাৎক্ষণিকভাবে কাছাকাছি থাকা সবাইকে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
বৈঠকে কেউ কেউ দলীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে সমাবেশে লোক জমায়েতের ব্যাপারে সেভাবে ভূমিকা না রাখার অভিযোগ করেন। এখন থেকে দলীয় সংসদ সদস্যদের আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আগ বাড়িয়ে বিএনপির সঙ্গে সংঘাতে না জড়াতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি কোথাও বসে পড়তে চাইলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘেরাও করার চেষ্টা করলে, তাদের উঠিয়ে দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে পুলিশের সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে।
গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই দিনেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যুবলীগের সমাবেশ থেকে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল গত সোমবার। কিন্তু বিএনপির মহাসমাবেশ ঘোষণার পর তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ পিছিয়ে বৃহস্পতিবার করার সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন দল।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আগ বাড়িয়ে বিএনপির সঙ্গে সংঘাতে না জড়াতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপি কোথাও বসে পড়তে চাইলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘেরাও করার চেষ্টা করলে, তাদের উঠিয়ে দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে পুলিশের সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে।
গতকালের যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এখন থেকে আর নিষ্ক্রিয় থাকা যাবে না। নির্বাচন পর্যন্ত সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংঘাত করব না। আমরা মাঠে সতর্ক থাকব। সংঘাত যারা করতে আসবে, তাদের প্রতিহত করব।’
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিএনপির মিত্র দলগুলোও রাজপথে নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকছে। এর বাইরে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ ডেকেছে।
এটাকে বাড়তি চিন্তা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। দলটির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশটি আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে ঢিল ছোড়ার দূরত্বে। সমাবেশটির সময়ও একই, বেলা দুইটায়। যা ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিএনপির মিত্র দলগুলোও রাজপথে নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকছে। এর বাইরে চরমোনাইয়ের পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ ডেকেছে।
এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি ও বিরোধীদের কর্মসূচির আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ডগ স্কোয়াডের তৎপরতা বাড়ানো হবে।
বিএনপি সীমান্ত থেকে অস্ত্র কিনছে—ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পেছনে গোয়েন্দা তথ্য থাকার কথা বলছেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা। তাঁরা বলছেন, বৃহস্পতিবারের আগে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সম্ভাবনাও রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর প্রবেশমুখে পুলিশের তল্লাশিচৌকি আরও সক্রিয় করা হবে।