ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মমতা বাংলাদেশের স্বাধীন মর্যাদাকে অগ্রাহ্য করেছেন। তাঁর বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করার শামিল এবং একটি স্বাধীন দেশের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের হুমকি।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, তাদের কী মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশ নিয়ে! বাংলাদেশের কোথায় অশান্তি ঘটছে? এ দেশে যত অশান্তি ঘটেছে, যত রক্তপাত হয়েছে, যত গুম-খুন হয়েছে, সব তো হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে। এখন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে, মানুষ নির্বিঘ্নে সহাবস্থান করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এ দেশের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একজন অসাম্প্রদায়িক ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হিসেবেই জানত। আজ তাঁর বক্তব্যে আবারও প্রমাণিত হলো, কট্টর হিন্দুত্ববাদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
রিজভী বলেন, মমতার এ প্রস্তাব (শান্তিরক্ষী পাঠানো) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা ও অপমান করার শামিল এবং একটি স্বাধীন দেশের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের হুমকি। বাংলাদেশের জনগণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ বক্তব্যে বিস্মিত ও হতভম্ব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রায় অধিকাংশ রাজনীতিবিদই বাংলাদেশের নাগরিক অধিকারকে মান্য করে না। সেই কাতারে মমতাও নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন। তাঁরা নিজ দেশের অন্যায় দেখেও দেখেন না। গুজরাটে হাজার হাজার মুসলিম হত্যা ট্র্যাজেডি এখনো বিশ্ববাসী বিস্মৃত হয়নি। কাঁটাতারের বেড়ার ওপর ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ, তাঁরা কি ভুলে গেছেন?’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে মনে হচ্ছে লুটেরা খুনি, গুম ও নির্যাতনকারী শেখ হাসিনার পতনে তাঁরা বিষণ্ন, বেদনায় মুষড়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকার একটি বিরাট অংশ বাংলাদেশবিদ্বেষী ভারতের রাজনীতিবিদদের পেছনে খরচ করা হচ্ছে।
তা না হলে ভারতের নীতিনির্ধারণী নেতারা এখন কেন এভাবে একযোগে বাংলাদেশবিরোধী জিগির তুলছে, এমন প্রশ্ন তোলেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগেও দেখেছি, সে দেশের রাজনীতিবিদেরা মুখে যা–ই বলুক, তাঁরা যে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেন। এর প্রমাণ হচ্ছে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই তিস্তা নদীর পানির চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। সুতরাং তিনি কী উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীকে বাংলাদেশে প্রেরণ করার প্রস্তাব করছেন, এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে খোলাসা করা উচিত।’
রিজভী বলেন, একটি অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লুটেরা রেজিমকে মদদ দিয়ে বিনিময়ে ভারত একতরফাভাবে অনৈতিক স্বার্থ ও ফায়দা হাসিল করছিল।
নেপালের উদাহরণ টেনে রিজভী বলেন, ৮১ শতাংশ জনগোষ্ঠী সনাতন বা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের দেশ নেপাল। দেশটির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যেমন উষ্ণ নয়, তেমনি নেপালের জনগোষ্ঠীও ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন তো নয়ই, বরং বৈরী ভাবাপন্ন। সুতরাং বুঝতে হবে, বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের প্রতি ভারতের অতি ভালোবাসা প্রকাশ ও এটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রতি হম্বিতম্বির পেছনে ভারতের কোনো ধর্মীয় ভাবাবেগ নেই। মূলত এর পেছনে ভারতের আধিপত্যবাদী আগ্রাসী মনোভাব ও ষড়যন্ত্র কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনাকুল ইসলাম প্রমুখ।