আট বছর পর অনেকটা ঘটা করে কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করল জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আজ শনিবার বিকেলে এই ইফতার অনুষ্ঠান হয়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাসহ দলটির ১৮ জন নেতা অংশ নেন। জামায়াতের ইফতারে আমন্ত্রিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন না।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে রাজনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে জামায়াত ইফতারের আয়োজন করেছিল।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ইফতারে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ারসহ চারজন নেতা অংশ নিয়েছিলেন। আজ জামায়াতের ইফতারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য ছাড়াও অংশ নেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও ফরহাদ হালিম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, কেন্দ্রীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীবিষয়ক সম্পাদক সদস্য অর্পণা রায়, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।
এ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে অংশ নেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান অলি আহমদ, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্পধারা বাংলাদেশের (একাংশ) নুরুল আমিন ব্যাপারী, জাগপার সভাপতি (একাংশ) খন্দকার লুৎফর রহমান, এনডিএম-চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, জাগপা আরেক অংশের রাশেদ প্রধান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, গণদলের চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) আবদুল করিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জাকির হোসেন খান, এবি পার্টির যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ন্যাপের আজহারুল ইসলাম ও লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান।
এর বাইরে অংশ নেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ।
ইফতার অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরোয়ার স্বাগত বক্তব্য এবং আমির শফিকুর রহমান সমাপনী বক্তব্য দেন।
বক্তব্যে শফিকুর রহমান আট বছর ইফতার অনুষ্ঠান না করতে পারার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ইফতারের সুযোগটি পরপর আট বছর আমাদের জন্য হয়নি। কী কারণে হয়নি, সেটা আপনারা জানেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যে এসে আজকের এই দিনেও এই অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত আমাদের ওপর অনেক প্রতিকূলতা ছিল।’
সবাইকে এক জায়গায় এসে শক্তভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘মুক্তি কখনো বিনা সংগ্রামে আর যুদ্ধে আসে না। এই জাতিকে সত্যিকার অর্থে মুক্তির স্বাদ নেওয়ার জন্য আরেকটিবার সত্যের পক্ষে সবাইকে বুক শক্ত করে দাঁড়াতে হবে। আমরা মনে করি না, দুনিয়ার কোনো শক্তি বা ব্যক্তি অসীম ক্ষমতাধর। সবারই সীমাবদ্ধতা আছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, ‘ক্ষমতায় যারা আছেন আমরা তাদের দুশমন নই, একই রক্ত। হজরত আদম–হাওয়ার (আ.) রক্ত আমাদের সবার শরীরে। আমরা তাদেরও কল্যাণ কামনা করি। আমরা সবাইকে সত্যের পথে আসতে বলি। হঠকারিতার পথ পরিহার করতে বলি। যদি এই ডাকে কেউ সাড়া দেয়, তাকে মোবারকবাদ।’
জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘সত্যের পক্ষে দাওয়াত দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। সে দাওয়াতে সাড়া না দিয়ে আমার ওপর যদি কোনো আঘাত আসে, তাহলে এর প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করার অধিকার আমার আছে। আমরা কারও সঙ্গে গায়ে পড়ে লাগতে চাই না। কিন্তু কেউ যদি পায়ে পাড়া দিয়ে আমার সঙ্গে বাধে, তখন তো আমার দায়িত্বটা আমাকে পালন করতেই হবে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘হঠকারিতা নয়, বিশৃঙ্খলা নয়, সত্যের পক্ষে বুক সটান (উঁচিয়ে) করে আমাদের দাঁড়াতে হবে। আমরা রাজনীতি করি, এটা আমাদের অপরাধ নয়। সরকারি দলের লোকেরা যদি রাজনীতি করার অধিকার রাখে, আমাদের প্রত্যেকটি নাগরিক সাংবিধানিক অধিকার বলেই সে–ও রাজনীতি করার অধিকার রাখে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক অধিকারের অপচয় হোক, অপচর্চা হোক—এটা আমরা চাই না। কিন্তু আমার ন্যায্য অধিকার তো আমাকে দিতে হবে। আমরা আহ্বান জানব, জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে আমরা যেন নিজের অবস্থাটা একটু পর্যালোচনা করি। এবং যার যেটা করণীয় নির্দ্বিধায় আমরা সেটা যেন করতে পারি। যার যেটুকু পাওনা সম্মান, তাকে সেটা অবশ্যই দিতে হবে।’
সোনারগাঁও হোটেলের বল রুমে অনুষ্ঠিত এই ইফতার মাহফিলে কোনো মঞ্চ ছিল না। দলের কোনো ব্যানারও টাঙানো হয়নি।
জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর নামে হোটেলের মিলনায়তন ভাড়া নেওয়া ছিল না। তাই হোটেল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যানার ও রাজনৈতিক বক্তব্যের ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন।