কিছু ঘটলেই বিএনপিকে দায়ী করা হয়। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো হয়, এই মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীর বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অভিযোগের জবাবে এই মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। একই সঙ্গে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের হাত আছে।
আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। সারের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল।
সম্প্রতি বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে সরকার এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বিষয়টি তদন্ত করার কথাও বলা হচ্ছে। এই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু হলেই বিএনপিকে দায়ী করা হয়। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো হয়।’
মির্জা ফখরুল পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতিদিন সবখানে আগুন লাগছে। এই আগুন লাগার পেছনে আপনারা আছেন। মানুষের দাবি উঠেছে সারের দাম কমাও, চালের দাম কমাতে হবে, বাঁচতে দিতে হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দিতে হবে, ভোটের অধিকার দিতে হবে। এই দাবিগুলোকে পাশ কাটানোর জন্য, মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নেওয়ার জন্য আপনারা আগুন লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন।’
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা (নিউ সুপার মার্কেটের) নিজেরাই বলেছেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় সিটি করপোরেশনের পোশাক পরে কয়েকজন লোক আসে। তারা সামনের ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে দেওয়ার জন্য গ্রিল দিয়ে সেখানে লোহা কেটে সিঁড়িগুলো ভেঙে দিয়েছিল। ওই গ্রিলের পয়েন্টে শর্টসার্কিট হয়েছে। তারপর সেখানে আগুন লেগে গেছে। তখন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। যখন পারেনি, তখন ওই লোকগুলো পালিয়ে গেছে। তাহলে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে কারা আছে? সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে আছে আওয়ামী লীগ। দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের ও এই সরকারের।’
১০ এপ্রিল সরকার ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি, এমওপি সারের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়ায়। দাম বাড়ানোর ফলে এখন ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া ২৫ টাকা, ডিএপি ১৯ টাকা, টিএসপি ২৫ টাকা এবং এমওপি ১৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। মূলত এই মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদেই সমাবেশ ছিল বিএনপির অঙ্গসংগঠন কৃষক দলের।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্য যে কৃষকদের শুধু অবহেলা নয়, চরম কষ্টের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মাথায় হাত দিয়েছেন। হঠাৎ করে সারের দাম প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, আইএমএফ তাদের শর্ত দিয়েছে যে ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। সারা পৃথিবীতে কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। কারণ, কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া না হলে তারা ফসল ফলাতে পারবেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের কৃষকদের গলা টিপে ধরার জন্য সরকার প্রতি কেজিতে সারের দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ২৯ টাকা খরচ হয়। সরকার দাম দিতে চায় ৩০ টাকা। পাঁচ টাকা সারের দাম বাড়ালেন, আর ধানের দাম দিচ্ছেন ৩০ টাকা। তাহলে কৃষক টিকে থাকবে কী করে। এই সরকার আসার পর শুধু ফসলের ক্ষেত্রে নয়, পোলট্রি, ডেইরি, মুরগির ফার্ম, গরুর ফার্মের বড়রা বড় হচ্ছে। আর মাঝারি ও ছোটরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফিরের সভাপতিত্বে এই সমাবেশ হয়। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।