আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জামায়াতের রুকন (সদস্য) সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলের আমির শফিকুর রহমান
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জামায়াতের রুকন (সদস্য) সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলের আমির শফিকুর রহমান

আওয়ামী লীগের তৈরি আইনেই তাদের বিচার করতে হবে: জামায়াতের আমির

পতিত আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনে যেসব কালাকানুন ও আইন তৈরি করা হয়েছিল, সেই আইন দিয়েই তাদের (আওয়ামী লীগের) বিচার চেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের বিষয়ে আরও বলেন, ‘যতদ্রুত সম্ভব ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা করে ওদের (আওয়ামী লীগের) সঠিক পাওনা বুঝে দিতে হবে।’

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জামায়াতের রুকন (সদস্য) সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা অবিচার জুলুম কারও ওপর চাই না। তারা (আওয়ামী লীগ) দীর্ঘদিন যেসব কালাকানুন আইন তৈরি করেছিল, তাই দিয়ে তাদের বিচার হতে হবে। আমরা বারবার বলে আসছি... তারা বলত আইন সবার জন্য সমান আর বিচার বিভাগ স্বাধীন। সেই সমান আইনে সমান বেনিফিট পাওয়ার অধিকার আওয়ামী লীগের আছে।  তারা যেন তাদের সঠিক পাওনাটা পায়। পাওনা থেকে যাতে তাদের বঞ্চিত করা না হয়। যার যেটা পাওনা, সেটাই যেন পায়।

আওয়ামী লীগের নাম আর মুখে নিতে চান না শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখন তাদের নাম কেউ সাহস করে নেয় না। তাদের দল যাঁরা করেন, তাঁরাও তাদের দলের নাম নিতে চান না। আমরা মজলুম জনগণ তাদের নাম নেব কেন?’

শফিকুর রহমান আরও বলেন, নিজের দলকে নিজেদেরই নিষিদ্ধ করার ইতিহাস তাদের আছে। তারা যখন একদলীয় বাকশাল কায়েম করে, তখন তারা তাদের দলসহ সব দল নিষিদ্ধ করেছিল। এবার জনগণ তাদের দল নিষিদ্ধ করেছে আল্লাহর সাহায্য নিয়ে।

জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম তারা (আওয়ামী লীগ) শিক্ষা নেবে। কিন্তু কয়লা ধুইলে ময়লা যে যায় না।  কয়লা যত পরিষ্কার করবেন আরও কালো হবে। কালো রংটা আরও ফুটে উঠবে। যত স্বচ্ছ পানি দিয়ে ধোবেন সাদা হবে না। লজ্জিত হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে একটা পথ তারা বের করতে পারত। সেটা না করে আনসার লীগ নামায়, সেটা না করে বিচার লীগ নামায়, সেটা না করে তারা এই দাবি লীগ, ওই দাবি লীগ নামিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।’

শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘ন্যাচারাল না আর্টিফিশিয়াল, জানি না, তারা (আওয়ামী লীগ) দাড়িও রাখা শুরু করেছেন। মাথায় টুপি দিচ্ছেন এবং আরেকটা রূপে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। একদিকে ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া, অন্যদিকে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া—আমরা যত দিন ছিলাম বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান হতে দিইনি। আমরা এখন নাই বাংলাদেশে চরমপন্থা আছে।  সবচেয়ে বড় চরমপন্থী যারা, তারাই তাদের সন্তানদের হাতে হাতুড়ি তুলে দিয়েছিল মাথায় হেলমেট পরিয়ে দিয়েছিল। এদের চেয়ে বড় চরমপন্থী এবং সন্ত্রাসী আর কেউ জন্ম নেয়নি।’

আওয়ামী লীগের শাসন আমল পুরোটাই চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের ছিল বলে অভিযোগ করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তারা সন্ত্রাস করে গেছে। আমরা সন্ত্রাস করব না। আমরা সন্ত্রাসকে ঘৃণা করি। আমরা জাতিকে আশ্বস্ত করেছি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে কোনো প্রতিশোধ নেব না। তারা যেমন মানুষকে দুঃখ কষ্ট দিয়েছে, মানুষের ওপর জুলুম করেছে, আমরা এটা করব না। আমরা অবশ্যই জুলুমের প্রতিকার চাইব বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে। আমরা সেই প্রতিকারটাই চাচ্ছি।’

দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশ্যে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা আগামীতে একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে চাই। সুতরাং আমাদের সীমাহীন ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।’  তিনি আরও বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের মানবতাকে গণতন্ত্রকে বাংলাদেশে জনগণের ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষাকে জবাই করা হয়েছে। ওই দিনই সত্যিকারার্থে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর বহু ত্যাগ–তীতিক্ষা স্বীকার করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট নিজেদের আপন পথ ফিরে পেয়েছি।’

‘বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব খুনিদের বিচার করতে হবে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্প্রতি গণ–আন্দোলনে যারা গণহত্যা করেছে, তাদের বিচার আগে করতে হবে। তাদের বিচার আগে এ কারণে করতে হবে; কারণ, শহীদদের তাজা রক্ত এখনো ভাসছে। আহত ব্যক্তিরা এখনো কাতরাচ্ছেন।

রুকন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। এতে দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতারা বক্তব্য রাখেন।