গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান। তাঁরা বলেছেন, আগে রাষ্ট্রীয় ভাষণে রাষ্ট্রপতি সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর কথিত পদত্যাগপত্র প্রাপ্তির কথা দেশবাসীর সামনে স্বীকার করলেও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তা অস্বীকার করেছেন। এটা স্ববিরোধিতা এবং তাতে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের আমির ও মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিশ্বস্ত এই রাষ্ট্রপতিকে জুলাই বিপ্লবের শত্রু মনে করি এবং তাঁর দ্রুত অপসারণ দাবি করছি।’
জুলাই বিপ্লবের চেতনার সঙ্গে যারাই ‘গাদ্দারি’ করবে, তারাই গণশত্রু হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হবে বলে মন্তব্য করেন হেফাজতের নেতারা।
বিবৃতিতে ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট জাতীয় দিবস বাতিল করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানান হেফাজতের দুই নেতা। তাঁরা বলেন, রক্তাক্ত জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পিতা একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেন। তাঁর বানানো রক্ষীবাহিনী নামক সন্ত্রাসী সংগঠনকে লেলিয়ে দিয়ে হাজার হাজার আলেম-ওলামা ও বিরোধী নেতা-কর্মী হত্যা করেন এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালান। স্বাধীন বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনের নজির তৈরি করেন স্বৈরাচারী মুজিব। তাঁর দলীয় লোকজনের সীমাহীন লুটপাটের ফলে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়। সেই দুর্ভিক্ষে অনাহারে মারা যায় দেশের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। তাঁরা আরও বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জনক মুজিব ভিন্নমত দমনে চারটি পত্রিকা বাদে সব সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করেন। তাঁর ফ্যাসিবাদী রাজত্বকে আরও নিরঙ্কুশ করতে তিনি সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল গঠন করেন। এভাবে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নের ঘাতকে পরিণত হন ফ্যাসিস্ট মুজিব।
বিবৃতিতে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান বলেন, মুজিবের বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরের শাসনকাল চেপে রাখা হয়েছিল তাঁরই অনুগামী স্বৈরাচারী কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে। শেখ হাসিনা পিলখানা ও শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে গত জুলাই-আগস্টেও একের পর এক গণহত্যা চালান। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে তিনি অবশেষে ভারতে পালিয়ে যান।
হেফাজত নেতাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিডিআর হত্যা, ৫ মে শাপলা চত্বর ও ২০২১ সাল এবং ২০২৪ সালে ছাত্র–জনতার ওপর গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের এখনো নিষিদ্ধ না করায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ একের পর এক প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাচ্ছে। ছাত্র–জনতার বিপ্লবকে আরও সংহত করে সফল করতে হলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো বিকল্প নেই।’