টানা পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে বিএনপিকে কোণঠাসায় রেখে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগামী ১২ দিনে চারটি বড় সমাবেশ করে নির্বাচনে নেমে পড়ার বার্তা দেবে দলটি। সব সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করবেন।
এর মধ্যে আজ শনিবার মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীতে বড় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এরপর চলতি মাসের প্রথমার্ধে কক্সবাজার, নরসিংদী ও খুলনায় আরও তিনটি বড় সমাবেশ আছে।
দলটির নেতারা বলছেন, আজকেরটিসহ এখনকার সমাবেশগুলোর পোস্টার-ব্যানার ও ফেস্টুনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার আধিক্য থাকবে। জোর দেওয়া হবে আওয়ামী লীগ সরকারের বাস্তবায়ন করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারে। নির্বাচন আসন্ন—এই বার্তা দিতেই সমাবেশ নিয়ে এই ভাবনা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, এখন যেসব সমাবেশ হবে, এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে দেখানো যে আওয়ামী লীগের পেছনে বিপুল মানুষের সমর্থন রয়েছে। এ জন্য সমাবেশে কে কত লোক আনবেন; দলের জেলা কমিটি ও সংসদ সদস্যদের বলে দেওয়া হয়েছে। মূলত এর মাধ্যমে দেশে নির্বাচনের একটা আবহও তৈরি করতে চায় আওয়ামী লীগ। কারণ, বিএনপির হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে। এ কারণে অনেক ছোট ছোট দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলে নির্বাচনে ভোটার আনা কঠিন হবে। এ জন্য রাজপথে বড় বড় সমাবেশ করে মানুষকে আশ্বস্ত করতে চায় আওয়ামী লীগ।
তফসিল ঘোষণার বেশি দিন বাকি নেই। এখন আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নির্বাচনের আবহে আছে। আজ সমাবেশে বিপুল সংখ্যায় লোক এনে ঢাকাবাসীকে নির্বাচনের বার্তা দেওয়া হবে।আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম
দলটির নেতারা বলছেন, আজকেরটিসহ এখনকার সমাবেশগুলোর পোস্টার-ব্যানার ও ফেস্টুনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার আধিক্য থাকবে। জোর দেওয়া হবে আওয়ামী লীগ সরকারের বাস্তবায়ন করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারে। নির্বাচন আসন্ন—এই বার্তা দিতেই সমাবেশ নিয়ে এই ভাবনা।
আজ বেলা আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেলে চড়ার কথা। তিনি মতিঝিলে গিয়ে উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারবেন। এরপর আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ঢাকা বিভাগের অধীনে জেলা ও মহানগর মিলে আওয়ামী লীগের ১৭টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এসব প্রতিটি জেলা থেকে ৫০ হাজার করে লোক আনার জন্য নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে বিপুল পরিমাণে লোক জমায়েত করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ছয়টি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয় গত মাসের প্রথম দিকে। এসব কমিটি, আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতা এবং নিজ নিজ জেলা কমিটি একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছে। জমায়েত বড় করার জন্য দলের সংসদ সদস্যদের প্রতিও নির্দেশনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বা মহানগরের কর্মসূচিতে সংসদ সদস্যদের মঞ্চে খুব একটা দেখা যায় না। এবার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সব জেলার দলীয় সংসদ সদস্যদের মঞ্চে রাখার ব্যবস্থা আছে। আর থাকবেন কেন্দ্রীয়, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ সদস্যদের গুরুত্ব দেওয়ার অর্থই হচ্ছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সর্বাত্মকভাবে ভোটের প্রস্তুতিতে নেমে গেছেন। এ কারণে বর্তমান সংসদ সদস্যরা ও অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের শক্তি দেখাতে লোক বেশি আনার চেষ্টা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রথম আলোকে বলেন, তফসিল ঘোষণার বেশি দিন বাকি নেই। এখন আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নির্বাচনের আবহে আছে। আজ সমাবেশে বিপুল সংখ্যায় লোক এনে ঢাকাবাসীকে নির্বাচনের বার্তা দেওয়া হবে।
ঢাকার পর ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন হবে। ওই দিন কক্সবাজারে দলীয় সমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন নরসিংদীতে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ওই দিন তিনি নরসিংদী স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দেবেন। ১৩ নভেম্বর খুলনায় সমাবেশ করবেন প্রধানমন্ত্রী।