আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, তা এখন মূলত নির্ভর করছে অর্থসংস্থানের ওপর।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনের জন্য ৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার বিষয়টিও রয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে মোট ৫ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট বরাদ্দ নিয়ে গতকাল সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নিজেদের চাহিদার বিষয়টি তুলে ধরেছে ইসি সচিবালয়। উল্লেখ্য, জাতীয় বাজেট তৈরির আগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য কোন খাতে কত বরাদ্দ প্রয়োজন, তা নিয়ে পৃথক বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে গতকাল ইসি সচিবালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বৈঠক শেষে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, বাজেট বরাদ্দ নিয়ে অর্থসচিবের সভাপতিত্বে ত্রিপক্ষীয় (অর্থ মন্ত্রণালয়, ইসি সচিবালয় ও পরিকল্পনা কমিশন) বৈঠক হয়েছে। সেখানে আগামী সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও কিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য ৩ হাজার ৯৫৪ কোটি ৪০ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ব্যয়ের খাত আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী বাজেট নিয়ে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ ২২৯ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। এর বাইরে ইভিএম মেরামতের জন্যই চাওয়া হয়েছে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এসব কারণে এবার বরাদ্দ বেশি চাওয়া হয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে বরাদ্দ ছিল ৭০০ কোটি টাকা।
বর্তমান কমিশন আগামী সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ জন্য নতুন করে দুই লাখ ইভিএম কেনার জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছিল ইসি। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রকল্পটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়।
এর আগে ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অধীনে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছিল ইসি। এত দিন তারা বলে আসছিল, তাদের কাছে থাকা দেড় লাখ ইভিএমে ৬০ থেকে ৭০টি আসনে ভোট করা সম্ভব। তবে ইসিকে এই যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) জানিয়েছে, দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে এখন প্রায় ৪০ হাজার যন্ত্র নষ্ট। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএমেরও মেরামত প্রয়োজন। মেরামতে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা খরচ হবে।
ইসি সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, তা এখন মূলত নির্ভর করছে অর্থসংস্থানের ওপর। এসব যন্ত্র মেরামতে যে বড় অঙ্কের টাকা প্রয়োজন, তা ইসির কাছে নেই। সরকার অর্থ বরাদ্দ দিলে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে ইসি।