বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ বুধবার নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ বুধবার নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পদযাত্রা করবে বিএনপি

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় দুই দিন এবং সারা দেশে এক দিন পদযাত্রা করবে তারা।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৮ জুলাই মহানগরীসহ ঢাকা এবং সারা দেশের মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা করা হবে। এ পদযাত্রার মধ্য দিয়েই তাদের পতনকে আরও ত্বরান্বিত করা হবে।

ঢাকা মহানগরীতে পদযাত্রা হবে দুই দিন। ১৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা করা হবে। ১৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।

এর আগে সমাবেশে বক্তব্যে বিএনপি নেতারা রক্ত দিয়ে হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন নির্বাচন হতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেই কেবল নির্বাচন হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা প্রাথমিক কর্মসূচি। এরপরও যদি আঙুলে ঘি না ওঠে, তাহলে কী করে ওঠাতে হয়, এ দেশের মানুষ তা জানে। নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদের প্রত্যাশিত কর্মসূচি দিয়ে এই সরকারকে সরিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’

শত বাধা–বিপত্তি উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোথাও ফয়সালা না হলে রাজপথে ফায়সালা হবে। জয় আমাদের হবেই।’

৩৬টির মতো রাজনৈতিক দল ও জোটের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আজকের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল, যারা বিভিন্নভাবে এত দিন ধরে কর্মসূচি করে আসছি, এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, তারা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আজকে আমরা যৌথ ঘোষণা দেব, যার যার জায়গা থেকে।’

যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ–আন্দোলনের এক দফার যৌথ ঘোষণার দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, দেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান সরকারের পদত্যাগ; সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, তার অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার; ফরমায়েশি সাজা বাতিল, সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুধু যুগপৎ আন্দোলনকারী দলগুলো নয়, এর বাইরে যাঁরা আছেন, এই সরকারের অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের, গণতন্ত্র ধ্বংসের বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করছেন, তাঁদেরও আহ্বান জানাচ্ছি যে আসুন, আমরা একসঙ্গে সমবেত হয়ে গোটা দেশের মানুষদের নিয়ে একটা উত্তাল আন্দোলন গড়ে তুলি। যেন এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার গঠন করতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই ঘোষণার পরপরই আপনি পদত্যাগ করুন। অন্যথায় দেশের ইতিহাস বলে দেয় পরে কিন্তু পালাবার পথও খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আজ বেলা দুইটায় এ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমরা এবারের নির্বাচন প্রতিহত করব।’ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা। সে কারণে আওয়ামী লীগের আজকের সমাবেশে মানুষ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

বিএনপি নেতা আবদুস সালাম বলেন, ‘গত ১৪-১৫ বছরে শেখ হাসিনা কোনো কথা শোনেননি। তাই ওনার এখন কোনো কথা বলারও দরকার নাই।’ তিনি বলেন, সরকারের কিছু কর্মকর্তা এখনো আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলেন। তিনি তাঁদের সতর্ক করেছেন।

এ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদিনও। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেই নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে যেতেই হবে।’

সরকার পতনের দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে আজ বিএনপির সমাবেশে উপস্থিত নেতা–কর্মীদের একাংশ

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা দাবি করেন, তাঁদের আজকের সমাবেশে নেতা–কর্মীদের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে যে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে। বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি শুরুর পর থেকে ১৭ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বরকতউল্লা বলেন, ‘এ জন্য আপনাদের বিচার হবে।’

আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে লুটপাটের রাজত্ব বানিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, ‘এ সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যায় না।’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শামসুজ্জামান বলেন, ‘আপনি নিজে ঠিক করবেন, নাকি আমরা ঠিক করে দেব; আপনাকে যেতেই হবে। এরশাদ থাকতে পারেননি, আপনিও থাকতে পারবেন না।’

নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবি আদায়ের প্রত্যয় জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন বলেন, সব শ্রেণি–পেশার মানুষ আজ রাজপথে নেমে এসেছে।

এর আগে সকাল থেকেই দলের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ১২টার মধ্যেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে ভরে যায় সমাবেশস্থল। নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তৈরি করা মঞ্চে গান পরিবেশন করা হয়। ফাঁকে ফাঁকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা বক্তব্য দিতে থাকেন।