রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন

দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করুন, ইতিহাস আপনাদের ধারণ করবে: বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন

অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করুন, তাদের অধিকার দ্রুততার সঙ্গে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাহলে মানুষ আপনাদের সাধুবাদ জানাবে, ইতিহাস আপনাদের ধারণ করবে। আর যদি তা না হয়, লক্ষ্মণ সেনকেও ইতিহাস ধারণ করেনি, তার শাসনব্যবস্থাও ফেরত আসেনি। হিটলারও ফেরত আসেনি, তার বংশধরেরাও আসেনি। পলাতক স্বৈরাচারের শাসনব্যবস্থাও বাংলাদেশে আর ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই।’

আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করে এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ কথাগুলো বলেন।

আলোচনায় প্রথম আলোতে বুধবার প্রকাশিত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে দুটি হত্যা মামলা থেকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশের এক তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির ঘটনার উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা।

এ প্রসঙ্গে প্রশাসন নিরপেক্ষ করতে ‘ঘাপটি মেরে থাকা পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের’ অপসারণে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, একটা মামলায় (হত্যা মামলা) তাদের (আওয়ামী লীগের) দুজন নেতাকে আসামি করা হয়েছিল, তদন্ত কর্মকর্তা তাঁদের বাদ দিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য যখন যাচ্ছে, তখন আবার ওই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটাকে প্রতিরোধ করেছে। অর্থাৎ ওরা ঘাপটি মেরে আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি যে আপনারা প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিগত স্বৈরাচারের দোসরদের যদি চিহ্নিত করে সরিয়ে দিতে না পারেন, তাহলে এ রকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আপনারা প্রতিরোধ করতে পারবেন না।’

একটি বাংলা প্রবাদের উল্লেখ করে জাহিদ বলেন, ‘বিড়াল নাকি প্রথম রাতেই মারতে হবে। বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন… উনিও কিন্তু বিড়াল প্রথম রাতে মেরেছিলেন বলেই জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নিরপেক্ষ হয়েছিল। আমরা ইউনূস স্যারের (মুহাম্মদ ইউনূস) প্রতি আস্থাশীল, পৃথিবীর মানুষের আস্থা আছে…সরকারকে সহযোগিতা করছে দেশের মানুষ একদম নিঃস্বার্থভাবে। কাজেই তাদের (সরকার) সিদ্ধান্ত নিতে হবে একেবারে বলিষ্ঠ, আরও যুগোপযোগী, আরও দ্রুততার সঙ্গে।’

‘ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করবেন না’

জাহিদ হোসেন বলেন, মনে রাখতে হবে, আজকে যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের রক্তের শপথ নিয়ে মনে রাখতে হবে বন্ধুদের, ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করবেন না। জাতি ৫ আগস্ট ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই স্বৈরাচার পালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ শক্তি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হতো, তাহলে সবাই আমরা ব্যর্থ হতাম। কাজেই সবাইকে ঐক্য ধরে রাখতে হবে…ঐক্য ধরে রাখার জন্য যেটি প্রয়োজন, সেটি হলো কমন এনিমিকে চিহ্নিত করুন এবং দ্রুততার সঙ্গে জনগণকে তার অধিকার আদায়ের সুযোগ দিন। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে।’

জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (জেটেব) ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা: প্রেক্ষিত টেক্সটাইল সেক্টর’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদসহ জেটেবের নেতারা বক্তব্য দেন।