পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার আগেই চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। নগর আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি বলয়ে সহযোগী সংগঠনটির ২০ নেতা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে এক পক্ষ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রয়েছে। তারা কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়ে এসেছে।
অভিযোগকারী পক্ষটির বেশির ভাগ সদস্য নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। অপর পক্ষটি আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলয়ের। এ পক্ষ বর্তমানে নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী বলে পরিচয় দেন।
শেষের দলটিতে রয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজসহ পাঁচজন। অভিযোগকারী পক্ষটিতে আছেন সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, সুজিত দাশ, মনোয়ার জাহান, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. সাইফুদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন।
তাঁদের অভিযোগ, সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন অংশটি স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অভিযোগকারী পক্ষটিকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে ডাকা হয় না। পাশাপাশি দলীয় কার্যালয়ে সভা না করে তা নিজেদের পছন্দের জায়গায় করা হয়। এ ছাড়া থানা কমিটি গঠনে ত্যাগী নেতাদের বাদ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। গত রোববার তাঁরা ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
জানতে চাইলে যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গিতে সংগঠন পরিচালনা করছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আমাদের প্রতি তারা সহনশীল নয়। বাদ দেওয়া হচ্ছে ত্যাগীদেরও। এ কারণে গত পাঁচটি কর্মসূচিতে আমরা যাইনি।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগ চট্টগ্রাম মহানগরে এখন থানাভিত্তিক কমিটি গঠনে কাজ করছে। এ জন্য থানাভিত্তিক সমন্বয় কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে না বিদ্রোহী পক্ষটি।
গত বছরের ৯ মার্চ স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এর সাত দিনের মধ্যে ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই কমিটি আজ পর্যন্ত হয়নি; বরং মহানগর কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করেই এখন থানা কমিটি গঠনের দিকে মনোযোগী হয়েছে।
ইতিমধ্যে চারটি থানায় কমিটি গঠনের জন্য সভা হয়েছে। এ সভা সফল করার জন্য একটা সমন্বয় কমিটি করা হয়েছিল। মাসখানেক ধরে এ কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রমে আ জ ম নাছির উদ্দীনের অংশটি যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তাদের কার্যক্রমে গণতান্ত্রিক মনোভাব নেই। এত দিন দলের জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমাদের অভিমত নেওয়া হচ্ছে না। তাই আমরা যাচ্ছি না।’
অপর সহসভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল উপমন্ত্রী মহিবুলপন্থী হলেও তিনিও কর্মসূচিতে যাচ্ছেন না। চুপচাপ রয়েছেন। তিনি ঢাকায় অভিযোগ দিতে না যাননি। তবে তাঁর মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। গত বছর বিজয় মেলায় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আবুল হাসনাত মো. বেলালের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এর প্রতিবাদ করেননি বলে বেলালের অভিমান রয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশে থানা সম্মেলনের কাজ চলছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে আমরা আমাদের ২০ সদস্যকে থানা ভাগ করে দায়িত্ব দিয়েছি। যদি কারও থানা পছন্দ না হয়, তাহলে বলতে পারত যে আমাকে অন্য থানায় দায়িত্ব দেন। কিন্তু তারা ওটা না করে কেন্দ্রে গেছে। আমরা তাদের মতামত চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের সভাগুলোয় আসছে না। একসঙ্গে বসলে সব সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু তারা বসছে না।’
মহানগরের তিনটি থানার সম্মেলন করার বিষয়ে কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক জিশান মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা কেন্দ্রে অভিযোগ দিয়েছেন, সেটার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদক করণীয় নির্ধারণ করবেন। আমরা থানায় সভা করার সময় সবাইকে সমন্বয় করার চেষ্টা করব।’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমানকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।