অল্প সময়ের ব্যবধানে সারা দেশের নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা বসছে আজ। মূল লক্ষ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘কৌশলের’ কারণে দলের ভেতর যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা কমানো। এ জন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব স্তরের নেতারা আজকের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। এমনকি দলের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিশেষ বর্ধিত সভায় সারা দেশ থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার দলীয় নেতা অংশ নেবেন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে এই সভা শুরু হবে। প্রথমে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সূচনা বক্তব্য দেবেন। এরপর বিভাগ বা জেলা নেতাদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের বিশেষ বর্ধিত সভা হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত আগস্টেও সভা হয়েছে। তবে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে এর আগে বিশেষ বর্ধিত সভার নজির পাওয়া যায় না।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিশেষ বর্ধিত সভায় সারা দেশ থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার দলীয় নেতা অংশ নেবেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় প্রধান একটা দিকনির্দশনামূলক বক্তৃতা করবেন। মূল বার্তা থাকবে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিতে হয়েছে কৌশলের অংশ হিসেবে। নির্বাচন শেষ, এখন সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের এই বর্ধিত সভার বিশেষ দিক হচ্ছে, এতে দলের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫৮ জন নেতা ও সমর্থক দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এসব আসনের অনেকগুলোতে ভোটের পরও সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে। মূলত তাঁদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্যই দলীয় সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র সদস্যদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুসারে, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন থেকে পরবর্তী ১০ দিনে সংঘাতে নোয়াখালী, মাদারীপুর, নেত্রকোনা ও ঝিনাইদহে চারজন নিহত হন। আহত হন আরও কয়েক শ মানুষ। এসব ঘটনায় আক্রমণকারী, আক্রমণের শিকার এবং আহত-নিহতের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থক। তাঁরা নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে সংঘাতে জড়িয়েছেন।
আওয়ামী লীগের এই বর্ধিত সভার বিশেষ দিক হচ্ছে, এতে দলের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫৮ জন নেতা ও সমর্থক দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এসব আসনের অনেকগুলোতে ভোটের পরও সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে। মূলত তাঁদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্যই দলীয় সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র সদস্যদেরও বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সংসদে যে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে দেখা করতে গেছেন, কথা বলেছেন, সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় বিভেদ মেটানোর তাগিদ দিয়েছেন। আজকের বৈঠকেও একই কথা বলতে পারেন বলে তাঁর ধারণা।
গতকাল শুক্রবার দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে কিছুটা ভুল–বোঝাবুঝি, মতবিরোধ, দ্বন্দ্ব, সংঘাতের মতো দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। এখন অভ্যন্তরীণ কলহের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে দলে সুদৃঢ় ঐক্য দরকার। সবকিছু ভুলে গিয়ে উপজেলা, সিটি ও পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোযোগ দিতে হবে। সবার মধ্যে ঐক্যের আবহ তৈরির জন্য বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রথম আলোকে বলেন, ভুল–বোঝাবুঝি যা হয়েছে, এর অবসানই মূল লক্ষ্য। আজকের বৈঠকের পরও ঐক্য প্রতিষ্ঠা না করলে কঠোর হবে দল, এই বার্তাও দেওয়া হবে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরাও আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে কিছুটা ভুল–বোঝাবুঝি, মতবিরোধ, দ্বন্দ্ব, সংঘাতের মতো দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। এখন অভ্যন্তরীণ কলহের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে দলে সুদৃঢ় ঐক্য দরকার। সবকিছু ভুলে গিয়ে উপজেলা, সিটি ও পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোযোগ দিতে হবে।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, ২২ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিশেষ বর্ধিত সভা করার প্রস্তাব এসেছিল। তখন বলা হয়েছিল, উপজেলা নির্বাচনের পর করা হবে। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর হবে। এর মধ্যে সরকার গঠনের পরই বিরোধী দল বিএনপিও কালো পতাকা মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এ পরিস্থিতিতে দলের তৃণমূলে ঐক্য দরকার বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন। এ জন্যই অনেকটা তড়িঘড়ি করে বিশেষ বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে।
সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে। ওই দিন বেশ কিছু পৌরসভারও ভোট হবে। এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে পারবেন। দলের নেতা-কর্মীরা যাঁকে খুশি তাঁর পক্ষে কাজ করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দলের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জেলা, মহানগর ও উপজেলা, থানা, পৌরসভার (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশ নেবেন। দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য; জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা বর্ধিত সভায় আমন্ত্রিত।