আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এখন এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। অন্যদিকে সরকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ পরিস্থিতি নিয়ে আজ রোববার প্রথম আলো কথা বলেছে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সঙ্গে।
ছাত্রদের আন্দোলনকে ঘিরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এখন সংকটের সমাধান কীভাবে হতে পারে?
রাশেদ খান মেনন: সরকার তো আলোচনার কথা বলেছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তো আলোচনা করতে চান না। আন্দোলনকারীরা যদি এক দফার কথাও বলেন, তাতেও তো আলোচনা করতে হবে। সেটা তাঁরা করবেন না। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে, ক্ষমতা দখল করে নেওয়া। কেউ কি দখল ছেড়ে দেবে? এখন আর ছাত্র আন্দোলন নেই। এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। সরকারবিরোধী দলগুলো যুক্ত হয়েছে।
আপনি কেন মনে করছেন এটি ক্ষমতা দখল বা রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে?
মেনন: রাজনৈতিক দলের যে এক দফা দাবি, সেই দাবিই দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলেছেন, একজন পছন্দসই ব্যক্তির নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। কথাটা লক্ষ করুন, একজন পছন্দসই ব্যক্তির কথা তাঁরা বলছেন। এই একজন পছন্দসই ব্যক্তি কে—ড. মুহাম্মদ ইউনূস নাকি শহীদুল আলম? মিসরে যেমন আরব বসন্তের চেষ্টা করা হয়েছিল, গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশে সে রকম করার চেষ্টা ছিল। এটিই ছিল তাঁদের লক্ষ্য।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একটা পর্যায় পর্যন্ত সরকারের দিক থেকে কোনো আলোচনা বা সমাধানের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি; বরং সরকার কঠোর অবস্থানে ছিল।
মেনন: সরকার তো বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রায় সব দাবি মেনে নিয়েছে। বাকিগুলো আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে। আলোচনা ছাড়া তো নৈরাজ্য হবে। কোনো সমাধান হবে না। তাঁরা কি নৈরাজ্যই চাইছেন?
তাহলে এখন সমাধান কী?
মেনন: সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই করতে হবে। সরকার তো আলোচনার পথ খোলা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আলোচনার জন্য তাঁর দরজা খোলা আছে। কিন্তু তাঁরা আলোচনা করতে চান না। তাহলে তাঁরা কী চান, এটাই আমার প্রশ্ন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল আপনার বৈঠক হয়েছে। তাঁর মনোভাব কী। সরকার কী করবে?
মেনন: আমি আবারও বলছি, প্রধানমন্ত্রী তো আলোচনার কথা বলেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের মূল দাবি ও অন্য দাবি মেনে নিয়েছেন। তিনি আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন। আলোচনা না করে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল শনিবার ঢাকায় সেগুনবাগিচা সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সভায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আন্দোলনরত ছাত্রদের নেতৃত্বকে সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল ওয়ার্কার্স পার্টি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে কোটা আন্দোলনের বিজয় সূচিত হয়েছে। এ বিজয়কে সংহত করে আন্দোলনের সময়ে ছাত্র হত্যার বিচার, নিহত-আহতদের ক্ষতিপূরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়াসহ ছাত্রদের অন্যান্য দাবি আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান হতে পারে। এ জন্য শিক্ষার্থী আন্দোলনের নেতৃত্ব রাজি হলে ওয়ার্কার্স পার্টি আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে সহায়তা করতে পারে। রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে সরকারের অবস্থানের প্রশ্নটিও আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান হতে পারে।
সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনায় ছাত্রদের আন্দোলনের দাবিগুলোর পাশাপাশি দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ঋণখেলাপি, ব্যাংক লুটের বিরুদ্ধে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ বিক্ষোভ মিছিল করার কথা বলা হয়।
সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও পলিটব্যুরোর সদস্য নুর আহাদ বকুল দেশের সর্বশেষ আন্দোলনরত ও রাজনৈতিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন।