জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন কোনো জোটে নেই। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কিছু আসনে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছিল। সে কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে হিন্দু মহাজোটের প্রতিনিধি সম্মেলনে জি এম কাদের এ কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘ভালো কাজ করলে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে পারি। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি গণমানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে, তাহলে ভবিষ্যতে আমরা তাদের সঙ্গে না-ও থাকতে পারি।’
ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড়ের সমালোচনা করেন জাপার চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ নির্বাচনে ইভিএম চায় না। আমরা শুরু থেকেই ইভিএমের বিপক্ষে। কারণ, ইভিএম হচ্ছে শান্তিপূর্ণ কারচুপির মেশিন। ইভিএমে নির্বাচন হলে, যাকে খুশি বিজয়ী করতে পারবে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিইনি। নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা অত্যন্ত কঠিন। আমরা বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা দেশ ও সাধারণ মানুষের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ করে জি এম কাদের বলেন, দেশে মেগা প্রকল্প চলছে মেগা দুর্নীতির জন্য। প্রতিটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়, কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এবং নির্দিষ্ট বরাদ্দে কোনো কাজ শেষ হয় না। প্রতিটি প্রকল্পে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এতে প্রমাণ হয়, সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিক ছিল না। আবার অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে এ প্রকল্পগুলো কখনোই লাভজনক হবে না।
দেশ থেকে অর্থ পাচারের উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, গত বছরে শুধু সুইস ব্যাংকেই চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আর এ কারণে গভীর ঝুঁকির দিকে এগোচ্ছে দেশের অর্থনীতি। জাতীয় বাজেট হচ্ছে শতভাগ দেশি-বিদেশি ঋণনির্ভর। দেশের পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করতে হবে ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে। মানুষের যদি আয় না থাকে অথবা কষ্টে জীবন যাপন করে, তাহলে ট্যাক্স দেবে কীভাবে?
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ দলীয় শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে চায়, সে যত বড় নেতাই হোক, যত প্রভাবশালী হোক অথবা যত অর্থবিত্তের মালিক হোক, কাউকে ছেড়ে দেব না। সব ষড়যন্ত্র উড়িয়ে দিয়ে আমরা দেশ ও মানুষের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করব।’
জি এম কাদের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের মধ্যে যারা রাজনীতি করে অথবা বিত্তশালী, তারা কোনোমতে ভালো আছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের সংখ্যালঘুরা জানমাল ও সম্মান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছে। ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালীদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে হতদরিদ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। জাতীয় পার্টির দরজা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সব সময় খোলা আছে বলে মন্তব্য করেন জি এম কাদের।
প্রতিনিধি সম্মেলনে জাপার কো–চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বিশেষ অতিথি ছিলেন। দীনবন্ধু রায়ের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি বিধান বিহারি গোস্বামী, মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, জাপার যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দে প্রমুখ।