রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে নতুন একটি দলের নেতারা। আজ বুধবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে তাঁরা এই আবেদনপত্র জমা দেন।
নতুন এই দলটির সঙ্গে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা আছে বলে আলোচনা রয়েছে। আবেদনপত্র জমা দিতে এসে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন দলটির নেতারা। এই দলের প্রতিষ্ঠা কবে, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক কী, দলের নেতাদের রাজনৈতিক পরিচয় কী—সাংবাদিকদের এসব প্রশ্ন এড়িয়ে যান দলটির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম (চান)। তিনি বারবার বলেন, তাঁদের দলটি সম্পূর্ণ নতুন দল। আরেকটু সংগঠিত হয়ে তাঁরা এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানাবেন।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি নতুন দল। নতুন প্রজন্মের আমার সাথে যাঁরা আছেন, বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে আমরা সংগ্রহ করেছি। তাঁদের নিয়ে আমরা কাজ করেছি। এখানে অন্য কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি বা সহযোগিতা আমরা ফিল করি না। এখন যদি কেউ কিছু বলে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো দায় নেই।’
জামায়াতের অনেকেই এই দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত, এমন আলোচনা আছে, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিডিপির চেয়ারম্যান বলেন, ‘না না। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলব। যা আছে আমরা পরিষ্কার করব। আজ এ বিষয়ে আমরা কোনো কথা বলব না।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিডিপি সভাপতি বলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যে তাঁদের সম্পর্কে অনেক কথা শুরু হয়েছে। তাঁরা এটা প্রত্যাশা করেননি। খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা বিস্তারিত জানাবেন।
সাংবাদিকেরা বারবার প্রশ্ন করতে থাকলে একপর্যায়ে আনোয়ারুল ইসালম দাবি করেন, জামায়াতের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, দেশের সংবিধান মেনে তাঁরা রাজনীতিতে এসেছেন। দেশের সংবিধানের প্রতিটি শব্দ তাঁরা সম্মান করেন এবং সেটা লালন করেই রাজনীতি করেন। সংবিধানের বাইরে কোনো কিছুতেই যেতে তাঁরা রাজি নন। মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে দল গঠন করা হয়েছে।
দলে যুদ্ধাপরাধী কেউ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিডিপির চেয়ারম্যান বলেন, যারা স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের কেউ যুদ্ধাপরাধী বানালে বানাতে পারে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হবেন। তখন বিস্তারিত বলবেন। তাঁরা এখন নিবন্ধনের জন্য এসেছেন। নিবন্ধনের যতগুলো শর্ত, সব পূর্ণ করে আবেদন করেছেন। আশা করছেন ইসির নিবন্ধন পাবেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। এর পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নিবন্ধন বাতিলের পর ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।
এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের একদল সংস্কারপন্থী নেতা-কর্মী ২০২০ সালের ২ মে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) নামে একটি দল গঠন করেছিলেন। এবি পার্টির নেতারাও দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন।
সদ্য আত্মপ্রকাশ করা বিডিপির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা না বললেও তাঁর এই দলের সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হকের (নাঈম) রাজনৈতিক পরিচয় সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। নিজামুল হক জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ছিলেন।