নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কি বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করবে ইসি

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল (বাঁয়ে) ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল (বাঁয়ে) ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আমন্ত্রণে সাড়া দেবে কি না, তা এখনো ইসিকে জানায়নি বিএনপি। তবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতিমধ্যে এটিকে সরকারের কূটকৌশল আখ্যা দিয়েছেন। একই সঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, কথা বললে সে বিষয়ে কথা হবে। অন্য কোনো বিষয়ে নয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কি এ বিষয়ে আলোচনায় সম্মত হবে?

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয় খোলাসা করেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। অবশ্য নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তা ঠিক করার এখতিয়ার কমিশনের নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকেই বলে আসছেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। কমিশন যদি মনে করে বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তাহলে তা তারা সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে পারে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের জুলাইয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডেকেছিল ইসি। সে সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি। এর আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে মতবিনিময়ের জন্যও দলটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সে আমন্ত্রণেও সাড়া দেয়নি বিএনপি। দলটি শুরু থেকেই বর্তমান কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

নির্বাচন অবশ্যই একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। কথা বললে সেই বিষয়ে কথা হবে, অন্য কোনো বিষয়ে কথা নয়
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে চিঠি দেন সিইসি। গতকাল সোমবার বিএনপির মহাসচিব এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আবার নাটক করে। নির্বাচন কমিশন সংলাপের জন্য আমাদের চিঠি পাঠায়। আমরা তো বলেছি, সংকট একটাই—নির্বাচন কীভাবে হবে, কোন ব্যবস্থায় হবে। নির্বাচন অবশ্যই একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। কথা বললে সেই বিষয়ে কথা হবে, অন্য কোনো বিষয়ে কথা নয়।’

বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আজ মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা এখনো বিএনপির কোনো চিঠি পাননি। যেহেতু তাঁরা বিএনপিকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাই বিএনপির যেকোনো সাড়া চিঠির মাধ্যমে পেতে হবে। বিএনপির যেকোনো বক্তব্য চিঠির মাধ্যমে আসাটাই কাঙ্ক্ষিত। সেটা পেলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা আলোচনায় এলে কী আলোচনা হবে, তা সময় বলে দেবে। আলাপচারিতার মধ্যে সেটা ফুটে উঠবে। এ বিষয়ে আগাম কোনো বক্তব্য বা ধারণা তিনি দিতে পারছেন না।

নির্বাচন কমিশন বলেছে, বিএনপি আলোচনায় আসতে সম্মত হলে তারিখ ঠিক করা হবে। বিএনপি যদি আলোচনার বিষয় (অ্যাজেন্ডা) ঠিক করে দেয় যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হতে হবে, তাহলে ইসি আলোচনায় যাবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘তারা যদি আলোচনার অ্যাজেন্ডা ঠিক করে দেয় তখন আমরা কী করব, তখন কমিশন সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এই মুহূর্তে আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারছি না।’

তারা (বিএনপি) যদি আলোচনার অ্যাজেন্ডা ঠিক করে দেয় তখন আমরা কী করব, তখন কমিশন সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবে
কাজী হাবিবুল আউয়াল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার

বিএনপির চিঠির জবাব পেতে কত দিন অপেক্ষা করবে কমিশন, এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এড়িয়ে যান সিইসি।

২২ মার্চ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় একটি আমন্ত্রণে অংশ নেয়। এর পরদিন ইসি বিএনপিকে চিঠি দেয়। এর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় আমাদের নলেজে নেই। আমাদের চিন্তা থেকে উদ্ভূত সিদ্ধান্ত থেকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য কূটনৈতিক মহলের কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘চাপের কথা যেটা বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ অমূলক ধারণা। কতক্ষণ পরপর চাপ দেবে, আমরা দেবে যাব, এটা হওয়ার কথা নয়।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কমিশনের সবাই মিলে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনারেরা অক্ষরে অক্ষরে চিঠি পাঠ করেছেন। কোনো কোনো সদস্য সংশোধনী দিয়েছেন। সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।