বিশেষ সাক্ষাৎকার : জি এম কাদের

আগামী নির্বাচন সরকারি দলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের মনে করেন, যেসব কারণে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়েছে, তার সব লক্ষণই বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও আমলা—এই তিন গোষ্ঠীর যোগসাজশে দেশের টাকা বিভিন্নভাবে লুটপাট ও বিদেশে পাচার হচ্ছে। এই ট্রায়াঙ্গেল (ত্রিভুজ যোগসাজশ) থেকে রক্ষা পেতে গেলে নির্বাচনব্যবস্থা সুষ্ঠু হওয়া দরকার।

তাঁর ধারণা, বর্তমান সরকার যে করেই হোক, আবারও ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে।তবে দেশে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালে একেবারে সাজানো নির্বাচন করা সহজ হবে না। ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টি ভবিষ্যতে ওই সিদ্ধান্তই নেবে, যা জনগণের স্বার্থের পক্ষে যায়। এমন আরও অনেক বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি সেলিম জাহিদ

  • রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও আমলা—এই ত্রিভুজ যোগসাজশে যে লুটপাট চলছে, সেটা থেকে রক্ষা পেতে সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার।

  • একেবারে সাজানো নির্বাচন করা এবার সহজ হবে না।

  • দেশ শ্রীলঙ্কার পথে যাচ্ছে।

  • সরকার একটা ভালো রকম চক্করে পড়ে গেছে।

  • জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগের ‘বি টিম’ নেই।

জি এম কাদের
প্রশ্ন

প্রথম আলো: বেশ কিছু দিন ধরে সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন। এত শক্ত কথা বলার উৎস কোথায়?

জি এম কাদের: উৎস আমার নিজের বিবেক। আমি সত্য কথা বলছি। এটা আমি আগেও বলতাম, হয়তো সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। কারণ, আমার সে রকম অবস্থান ছিল না রাজনীতিতে। কিন্তু যখনই যেকোনো রাজনীতিক বিষয়ে প্রশ্ন এসেছে, মোটামুটি সত্যটা বলার চেষ্টা করেছি। এখন কথাগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। হয়তো আমার বয়স, অভিজ্ঞতার কারণে কথাগুলো আরও গুছিয়ে বলতে পারছি এবং সাধারণ জনগণ তা গ্রহণ করছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনি প্রায় বলেন দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে, এক ব্যক্তির শাসন চলছে। এভাবে বলার সাহস পান কীভাবে?

জি এম কাদের: আমি যা বলি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলি, যুক্তি দিয়ে বলি। তথ্যগুলো একেবারে টেক্সট বুক যেমন সংবিধান, অথবা কোনো সরকারি সংস্থা বা কোনো বেসরকারি গবেষণা সংস্থা—এগুলো থেকে তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে বলি। এখন যেটা বলেছি একনায়কতন্ত্র—১৯৯০ সালের পর আমাদের সংবিধানে যখন সংসদীয় গণতন্ত্র এল, তখন থেকেই বলছিলাম, এটা সংসদীয় গণতন্ত্র তো মোটেই নয়, এখানে গণতন্ত্র আছে বলেই আমার মনে হয় না।
খেয়াল করলাম, প্রতিবার সরকার গঠনের পর কিছু না কিছু পরিবর্তন করে এটাকে (সংবিধান) পুরোপুরি একনায়কতন্ত্রের দিকে নিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার এসে পঞ্চদশ সংশোধনী করে সংবিধানকে একনায়কতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাওয়াই শুধু নয়, ওটাকে একনায়কতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে তৈরি করেছে। কফিনের শেষ পেরেক ছিল ষোড়শ সংশোধনী। নিম্ন আদালত শতভাগ, উচ্চ আদালত রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রভাবের আওতাধীন। প্রশাসন তো নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে সরকারপ্রধানের হাতে থাকেই, সংসদ—সেটিও সংবিধানের ৭০ ধারার কারণে ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান স্তম্ভ এবং সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তাতে করে একনায়কতন্ত্রটা যে পুরোপুরি চালু আছে, এ বিষয়টা তো একেবারে পরিষ্কার।

প্রশ্ন

যদি কেউ বলে জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা কম, সে কারণেই আপনি এ বিষয়টাতে উচ্চকণ্ঠ।

জি এম কাদের: এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশে সবকিছুকে বাঁকা চোখে দেখা হয়। জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা কম বা বেশি, এটার সঙ্গে সংবিধানের কোনো সম্পর্ক নেই। জাতীয় পার্টি নেই—এ রকম ধারণা করেও যদি কেউ চিন্তা করে, তাহলেও বুঝতে পারবে যে একবার যখন আপনি সংখ্যাগরিষ্ঠ হন, তখনই আপনি প্রধানমন্ত্রী হন। এবং এই সংখ্যাগরিষ্ঠতাটা কোনোক্রমেই যাতে না ভাঙা যায়, তার জন্যই সংবিধানে ৭০ বিধান করা হয়েছে। এই বিধান অনুযায়ী, দলীয় সংসদ সদস্যরা সব সময় বাধ্য থাকবেন, তাঁদের বিবেক-বিবেচনা-বুদ্ধি কিছুই তাঁরা ব্যবহার করতে পারবেন না। সংবিধানে এ রকম বিধান থাকলে সেখানে কীভাবে স্বাধীন সিদ্ধান্ত হওয়া সম্ভব—যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর সিদ্ধান্ত হয়।

প্রশ্ন

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কথা বললেন। কিন্তু আপনিও তো পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের [২০/১(১)ক)] ধারা ব্যবহার করে দল নিয়ন্ত্রণ করছেন।

জি এম কাদের: রাষ্ট্র পরিচালনা যদি গণতান্ত্রিকভাবে হয়, তাহলে রাষ্ট্রের ভেতরে সব সংগঠন গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হবে—এ রকম কোনো যুক্তি নেই। এটা একটা ভুল ধারণা। অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষকেও আমি কথাটা বলতে শুনেছি। একটা রাষ্ট্র যদি গণতান্ত্রিকভাবে চলে, তাকে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতা নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতা করতে হয় না। কারণ, এটা প্রতিযোগিতার বিষয় নয়, রাষ্ট্রকে পরিচালনার বিষয়। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, তারা গণতান্ত্রিকভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, এই প্রতিনিধিরা জনগণের কথামতো দেশ চালাবেন—এটিই হলো রাষ্ট্র চালানোর গণতান্ত্রিক পন্থা।
কিন্তু আমি যদি বলি সেনাবাহিনীও গণতান্ত্রিকভাবে চলবে—এটা চলতে পারে না। যদি বলি প্রশাসনও গণতান্ত্রিকভাবে চলবে, এটাও চলতে পারে না। তাদের পারপাসটা আলাদা। রাজনৈতিক দলের পারপাস হলো—ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আমরা অন্য পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করি। কাজেই এই প্রতিযোগিতা করতে গেলে আমাকে কতগুলো বিষয় নিজের হাতে রাখতে হয়। যেমন সেনাবাহিনীর যুদ্ধ জয় করতে হলে কিছু শৃঙ্খলা রাখতে হয়, ক্ষমতা রাখতে হয়, জেনারেলের অর্ডার মানতে হবে—সেটা যতই অযৌক্তিক হোক। আমাদের যেহেতু ক্ষমতার লড়াই করতে হয়, সেখানে রাজনৈতিক দলের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কিছু ধারার দরকার আছে।

প্রশ্ন

সরকারের সমালোচনাকে আপনি ‘সত্য কথন’ বলছেন। সরকারের দিক থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পান?

জি এম কাদের: প্রতিক্রিয়া তো আসেই কিছু না কিছু, অনেক জায়গায় অনেকে অনেক কথা বলেন। তবে সরকারের উচ্চ মহল থেকে তেমন কঠোরভাবে প্রতিক্রিয়া আসেনি।

প্রশ্ন

কিন্তু সেদিন তো বললেন, দেশ শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছে—এ কথা বলার জন্য আপনাকে মূর্খ বলা হয়েছে।

জি এম কাদের: আমাদের সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন। উনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, আমরা খুব বন্ধু মানুষ এবং একসঙ্গে ছিলাম। উনি বলেছেন, এটা আমাকে একটু আশ্চর্য করেছে। কারণ, আমি যখন কথা বলি, সব সময় যুক্তি দিয়ে বলি।

প্রশ্ন

তাহলে কী কথাটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে বলেছে?

জি এম কাদের: ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলা উচিত নয়। কারণ, আমরা দেশের সম্পর্কে আলাপ করছি। কিন্তু ওনার আক্রমণটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে গেছে। আমি যেটা বলেছি, সেটার মধ্যে যুক্তি ছিল। সেটাকে উনি বলতে পারতেন যে যুক্তিটা সঠিক নয় বা ভুল তথ্য। কিন্তু আমি ভুল তথ্য দিইনি। আমি এখনো বলছি, দেশ শ্রীলঙ্কার পথে যাচ্ছে। যদি আমরা ঠেকিয়ে দিতে না পারি, ওই পথে চলে যাবে, চলে গেছে এটা আমি বলিনি।

প্রশ্ন

আপনি বলেছেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হওয়ার পথে। কোন যুক্তিতে?

জি এম কাদের: জিনিসের দাম বাড়া, বিদ্যুতের ঘাটতি, টাকার অবমূল্যায়ন, রিজার্ভ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে চলে যাওয়া—দেউলিয়া হওয়ার আগে এর সবই শ্রীলঙ্কায় হয়েছিল। এসব লক্ষণ বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেছে। দেশের আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ তিন মাসের নিচে চলে গেলে এটাকে বিপজ্জনক ধরা হয়। সরকার বলছে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার, আইএমএফ বলছে ৩১ বিলিয়নের বেশি নেই। রিজার্ভ তিন মাসের নিচে নেমে এলে তখন আইএমএফ যদি টাকা না দেয়, তাহলে আমাদেরও শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমরা যদি রিজার্ভ থেকে টাকা না ছাড়ি, তাহলে টাকার দাম আরও কমবে। আবার জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকবে। দেশ সেই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকেই যাচ্ছে। এটাকে বেলআউট করতে গেলেও সময় নেবে এরা (আইএমএফ)। একসঙ্গে বেশি টাকা দেবে না। কিন্তু সরকারের দরকার অনেক টাকা। সে জন্য বলছি, আমরা এখন ঝুঁকির মধ্যে আছি।
আরেকটা জিনিস শ্রীলঙ্কা যেটা করেছে, সেটা বাংলাদেশও করেছে। সেটা হলো মেগা প্রকল্পগুলোতে (বড় প্রকল্প) যে টাকা খরচ করেছে, বেশির ভাগ প্রকল্প থেকে আয়টা সেভাবে আসবে না। শ্রীলঙ্কায় যেটা হয়েছে, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও আমলার ট্রায়াঙ্গেল (ত্রিভুজ যোগসাজশ)। এই ট্রায়াঙ্গেল কাজ করেছে দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য। বাংলাদেশেও এই ট্রায়াঙ্গেল আছে, এটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত। এই ট্রায়াঙ্গেলে যথেষ্ট পরিমাণে টাকা অপচয় হচ্ছে এবং টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকার যখন ঋণ নিতে চাইবে বা বেতন দিতে চাইবে, তখন টাকা ছাপতে হবে। টাকা যদি ছাপতে হয়, তার বিপরীতে যদি পর্যাপ্ত রিজার্ভ বা গ্যারান্টি না থাকে, তাহলে টাকার অবমূল্যায়ন আরও হতে থাকবে। সরকার একটা ভালো রকম চক্করে পড়ে গেছে। এটা তারা প্রকাশ করছে না, স্বীকার করছে না। এ কথাগুলো আমি সরকারি হিসাব থেকেই বলছি। এতে ৮০ শতাংশ মানুষ সংকটের কবলে পড়ে যাবে। তাদের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে এবং এটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে শিগগিরই। এটা খুব বিপজ্জনক দিক। সবচেয়ে বড় কথা, যেকোনো সংকট বা যেকোনো পরিস্থিতিতে সরকারের ওপর আস্থাটা বড় বিষয়। আমার ধারণা, বর্তমান সরকারের ওপর বেশির ভাগ মানুষের কোনো আস্থা নেই।

প্রশ্ন

এই যে সরকারের সমালোচনা করছেন, মানুষ বিরোধী দল হিসেবে আপনাদের কতটা আস্থায় নিচ্ছে?

জি এম কাদের: মানুষের আস্থাহীনতা ছিল একসময়। যার জন্য আমাদের দলের একটা আইডেনটিটি ক্রাইসিস হয়ে গিয়েছিল। আমার ধারণা হয়েছিল যে দলটাকে সাধারণ মানুষের চোখে আওয়ামী লীগের ‘বি টিম’—এ রকম মনে হয়েছে। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগের বি টিম অনেক দিন থেকেই নেই। অফিশিয়ালি নেই এবং আন–অফিশিয়ালিও নাইনটি নাইন পারসেন্ট আমাদের যারা সমর্থক, নেতা-কর্মী—কেউই আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই।

প্রশ্ন

কবে থেকে নেই।

জি এম কাদের: অনেক আগে থেকে নেই। প্রথমে আমাদের সঙ্গে (২০০৮ সালে) জোট ছিল, পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে নির্বাচনী সমঝোতা ছিল। সমঝোতা মানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের প্রার্থী দিইনি আওয়ামী লীগের জায়গায়, আবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি আমাদের জায়গায়। তখন থেকেই মানুষের ধারণা হয় যে আমরা ও আওয়ামী লীগ একই ধরনের রাজনীতিতে আছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর যেদিন থেকে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে অফিশিয়ালি ঘোষণা করা হয়, সে দিন থেকেই সরকারবিরোধী যে ভূমিকা রাখা উচিত, জনগণের স্বার্থে আমরা সেটা রেখে চলেছি।

প্রশ্ন

ভোটের অধিকার হরণ করার জন্য সরকারের সমালোচনা করেন, কিন্তু ‘রাতের ভোট’-এর সুবিধাভোগী তো আপনারাও।

জি এম কাদের: সমালোচনা করছি কারণ, এটাকে আমরা পছন্দ করি না। বেনিফিশিয়ারি শুধু আমরাই নয়, ২০১৮–তে কিন্তু বিএনপিও এসেছিল, সব দলই এসেছিল। তখন ওই ধরনের একটা বোঝাপড়া ছিল যে এটা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সব দলই অংশগ্রহণ করছে। পরবর্তী সময়ে সেটা সেভাবে হয়নি। কিন্তু তারপর বিশেষ করে ২০১৮-এর জাতীয় নির্বাচনের পরে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, উপনির্বাচন—এগুলো প্র্যাকটিক্যালি পুরো নির্বাচনব্যবস্থাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। এরপর নির্বাচনের ওপর মানুষের কোনো আস্থা নেই। নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। উপনির্বাচনে একটা জায়গায় আমাদের প্রার্থীকে মারধর করে কাপড়চোপড় পর্যন্ত খুলে ফেলা হয়েছে।

প্রশ্ন

এই যদি অবস্থা হয়, আগামী নির্বাচনে কী দেখছেন।

জি এম কাদের: আমি বারবার একটা কথা বলছি, সেটা হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী সরকার। প্রশ্ন আসছে, এ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। আমরা বলছি, দুটো ব্যবস্থাই ফেল করেছে। সরকারের অধীনে নির্বাচনকে আমরা সমর্থন করি না, যেহেতু এটা কর্তৃত্ববাদী সরকার। এক ব্যক্তির হাতে যখন সমস্ত প্রতিষ্ঠান, সেই ব্যক্তি যদি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হন, বা যে কেউ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে তাঁকে পরাজিত করা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যাবে। এ ধরনের নির্বাচন কখনোই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না।
আরেকটা হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ ব্যবস্থাতেও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সুযোগ আছে। তবে আমরা একটা বিকল্প ব্যবস্থা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কী ব্যবস্থা হলে মোটামুটি একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখন সরকারি দল বলছে, এ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। কারণ, তারা সেভাবেই সংবিধান পরিবর্তন করেছে, সেভাবেই প্রশাসনকে সাজিয়েছে। এসব বিএনপিও করেছিল। এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলই সাংঘর্ষিক অবস্থান নিচ্ছে। দেশের স্বার্থে এ বিষয়ে সবাই বসে একটি ব্যবস্থা বের করা উচিত। আমরা মনে করি, সরকারেরই এর জন্য উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন

জাতীয় পার্টি যে প্রধান দুই দলের বিকল্প শক্তি ভাবে—এটা কতটা বাস্তবসম্মত?

জি এম কাদের: জনগণ যদি সত্যিকার অর্থে ভোট দিতে পারে, তখন এটা বাস্তবসম্মত হবে কি না, জানা যাবে। এ বছর না হলে আগামীবার হতে পারে, না হলে তার পরেরবার হতে পারে। তবে এর প্রয়োজনীয়তা আছে, এটা সত্য। জনগণের হাতে যতক্ষণ ক্ষমতা না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবসম্মত বলতে কোনো কিছু নেই। সরকারপ্রধান যা বলবেন, সেটিই বাস্তবসম্মত। এখন বাংলাদেশের নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ আর বলা যায় কি না, আমার সংশয় আছে। কারণ, জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার ক্ষমতা হারিয়েছে। যাঁরা শাসক হচ্ছেন, তাঁরা সত্যিকার অর্থে রাজার মতো ব্যবহার করছেন, প্রজাদের কথামতো কোনো কাজ করছেন না। ফলে প্রজাদের দ্বারা গঠিত যে রাজনৈতিক দল, তাদের কথায় এখন রাজনীতি হচ্ছে না। যার জন্য জনগণ রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আস্তে আস্তে গুরুত্ব-আস্থা হারিয়ে ফেলছে। সামনের নির্বাচন পর্যন্ত যদি এভাবেই চলতে থাকে, আমি মনে করি নির্বাচনের পরে জনগণ সম্পূর্ণভাবে প্রজা হয়ে যাবে। অন্যদিকে রাজনীতিতে হয়তো ফরমায়েশি কিছু দল থাকতে পারে; নেতা থাকবে, সাইনবোর্ড থাকবে, কিন্তু রাজনীতি থাকবে না।

প্রশ্ন

নির্বাচন এলে জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি দেখা দেয়। একটি আওয়ামী লীগপন্থী, অন্যটি বিএনপিপন্থী। এটি কেন?

জি এম কাদের: না; বিভক্তি দেখা দেয় না, বিভক্তি করার চেষ্টা করা হয় দলকে দুর্বল করার জন্য। যেহেতু বিকল্প একটা ধারার যে রাজনীতিটা আমরা করতে চাইছি, এটার প্রতিপক্ষ সাধারণত যাঁরা সরকারে থাকছেন, তাঁরা এটা পছন্দ করছেন না।

প্রশ্ন

২০১৪ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একটি অংশ নির্বাচন করল। এবারও কি সে রকম কিছুর আশঙ্কা আছে?

জি এম কাদের: আশঙ্কা আছে বা নেই আমি বলব না। জাতীয় পার্টির রাজনীতিটাকে ধ্বংস করার জন্য অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র অনেক সময়ে হয়েছে। এটা প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার একটা অস্ত্র। দলে ভাঙন সৃষ্টি করা, এটা সব সরকারের আমলেই আমরা মোকাবিলা করেছি। তবে ২০১৪ সালে একটা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে জাতীয় পার্টি। সামনে হবে না, তা একেবারে স্পষ্ট করে বলা যায় না। এ ধরনের অবস্থায় জাতীয় পার্টি টিকে আছে। সামনেও টিকে থাকবে ইনশা আল্লাহ।

প্রশ্ন

প্রসঙ্গটি তোলার কারণ, অসুস্থতার মধ্যেও রওশন এরশাদের হঠাৎ করে দেশে আসা, সংসদে যোগ দিয়ে সরকারের প্রশংসা করা, হোটেলে মতবিনিময় সভা করা—এগুলোকে অনেকে ইঙ্গিতপূর্ণ মনে করছেন।

জি এম কাদের: এটাকে (রওশন এরশাদের তৎপরতা) আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। এটা করার জন্য হয়তো চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এটা খুব একটা কার্যকর হয়নি। কেননা আমার ভাবি বারবার আমাকে বলেছেন যে আমাদের (জাতীয় পার্টির) রাজনীতি যেটা আমি চালিয়ে যাচ্ছি—সেটাতে ওনার সমর্থন আছে। এটাতে তিনি কোনো রকমের বাধা সৃষ্টি করবেন না। তবে ওনাকে নিয়ে কিছু লোক খেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দলের নেতা-কর্মীরা বা যারা দলের আসল শক্তি, তারা খুবই ঐক্যবদ্ধ।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: অন্যদিকে বিদিশা সিদ্দিক এবং এরিকেরও একটা তৎপরতা লক্ষণীয়, সেটাকে কীভাবে দেখছেন?

জি এম কাদের: এটাকে আমি একেবারেই গুরুত্ব দিই না। এটা আমার কাছে মনে হয় সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন। কিছু গণমাধ্যম ফাঁপাচ্ছে, কেন ফাঁপাচ্ছে জানি না। হয়তো কারও ইঙ্গিত থাকতে পারে। তবে এটা নিয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সরকারের সমালোচনামূলক আপনার বক্তব্যগুলোর অনেকটাই বিএনপির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। নির্বাচনী মাঠেও এ রকম মিল হওয়ার সম্ভাবনা আছে?

জি এম কাদের: আমি সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলি। যদি বিএনপিও সাদাকে সাদা বলে, তাহলে তো মিল হতেই পারে। আর রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে সমঝোতা, রাজনীতিতে এমন একটা সম্ভাবনা সব সময়ই থাকে।
আওয়ামী লীগ যে এত দিন পর্যন্ত ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলেছে; আমাকে তো এটাও অনেকে বলেছেন যে আওয়ামী লীগ অনেক সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গেও গোপনে সমঝোতার চেষ্টা করছে। সত্য-মিথ্যা জানি না, তবে আগেও তারা কিছু দলকে তো তাদের হাতে নিয়েছিল। রাজনীতিতে স্পষ্টভাবে হ্যাঁ বা না বলা মুশকিল। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, জনগণের চাহিদা ও দেশের ভবিষ্যৎ—সবকিছু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিএনপি সংলাপের প্রস্তাব দিলে বসবেন?

জি এম কাদের: আমি একক সিদ্ধান্তে কখনো কোনো কাজ করছি না। প্রস্তাব এলে আমরা দলীয় ফোরামে আলাপ করব, দরকার হলে সাধারণ বর্ধিত সভা করে নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। দেশের মানুষ আমাদের একটা নিয়ামক শক্তি মনে করে। আমরা যেদিকে যাই, সাধারণত ক্ষমতা সেদিকে চলে যায়। সেদিক থেকে আমাদের একটা গুরুত্ব আছে। এ গুরুত্বটা যাতে কাজে লাগে, জনস্বার্থের পক্ষে যায়, সে জন্য আমরা সবার মতামত নিয়ে করতে চাই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতার নিয়ামক শক্তি বললেন, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনেও পাশে চাইলে যাবেন?

জি এম কাদের: আগেই বলেছি, এসব বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত পরে নেব, কথাবার্তা বলে নেব। এগুলো হ্যাঁ বা না স্পষ্টভাবে বলার সময় এখনো আসেনি। এগুলো নির্ভর করছে সামনের দিকে রাজনীতি দেখে। আমরা রাজনীতিতে পরিবর্তন চাইছি। পরিবর্তনের জন্য পরিবর্তন নয়। শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন হবে, কাজকাম একই চলবে—এমন পরিবর্তন চাইছি না। আমরা সত্যিকার অর্থে গুণগত পরিবর্তন চাইছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন। এই মিত্রতায় জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অর্জন কী? কখনো দলীয়ভাবে সে মূল্যায়ন হয়েছে?

জি এম কাদের: দলীয়ভাবে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। রাজনৈতিক অর্জন একেবারে নেই, তা নয়। তবে অর্জনের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাল্লাটাই ভারী হবে মনে করি।
অর্জনটা হলো এটাই, আমরা আমাদের স্বকীয়তা নিয়ে রাজনীতিটা করতে পারছি। বিএনপির সঙ্গে যদি অনেক আগে থেকে জোট করতাম, যেহেতু বিএনপির নব্বইয়ের পর থেকে বিভিন্নভাবে শক্তিশালী হয়েছে, সেখানে গেলে আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেখানে আমরা নীতিগতভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলাম। সেখানে আমরা একটা বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে পেরেছি। তবে জনপ্রিয়তা বা সংগঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের সেভাবে বেড়ে উঠতে দেয়নি। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত হোক, তারা আমাদের আস্তে আস্তে অস্তিত্বসংকটের দিকে ফেলে দিয়েছে। এর কারণ হলো, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যতটা মূল্য দিয়েছে, নির্বাচনের পরে ক্ষমতার পার্টনার হিসেবে জাতীয় পার্টিকে সেভাবে মূল্য দেয়নি, হয়তো কিছু কিছু ব্যক্তিকে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আগামী নির্বাচনটা কেমন হবে মনে করেন?

জি এম কাদের: সরকার ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করার বা যেকোনো প্রকারে জেতার চেষ্টা করবে বলে আমার ধারণা। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায়। মানুষ এক মেয়াদের পর পরিবর্তন দেখতে চায়, সেখানে তিন মেয়াদ হয়ে গেছে। ফলে ভালো কাজ যতই হোক, খারাপ কাজগুলো মানুষের মনে বেশি দাগ কাটে। সেই হিসেবে মনে করি, সরকারি দলের জন্য বড় ঝুঁকিপূর্ণ হবে সামনের নির্বাচন। তারা যদি মনে করে কোনোক্রমেই ক্ষমতায় আসতে পারব না; এ রকম হলে আমি আশঙ্কা করি, দলটির অস্তিত্বের ওপর আঘাত আসতে পারে। এই আশঙ্কাটা তাদের মধ্যেও আছে। সে কারণে তারা যে করেই হোক, ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ‘যে করেই হোক বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবে’ বললেন। এর সম্ভাব্য পদ্ধতিটা কী হতে পারে?

জি এম কাদের: এখন আমরা একটা জিনিস অনুভব করছি যে ইভিএম একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে। এই কারণে যে ইভিএমের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে কারসাজি (ম্যানিপুলেশন) করা যায়। অন্য যেসব পন্থায় কারসাজি করা যায় তাতে সংঘাত, রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। ইভিএম যদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে এটাতে সম্ভব। ভোটের পরবর্তী সময়ে কোনো প্রমাণ থাকবে না যে কেউ এটা চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। এ কারণে ইভিএম নিয়ে এত আলাপ-আলোচনা বলে আমার আশঙ্কা।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনি বলছিলেন বাংলাদেশের ব্যাপারে বিদেশিদের উদ্বেগ এখন অনেক বেশি, বিশেষ করে আগামী নির্বাচন নিয়ে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত—এসব দেশের নানা হিসাব-নিকাশ ও ভিন্ন অবস্থানের কথাও শোনা যায়। নির্বাচনে এর কি কোনো প্রভাব পড়তে পারে?

জি এম কাদের: আমি ইউরোপ বা এ দেশগুলোর যে মনোভাব দেখেছি, সেটা হলো তারা মনে করছে বাংলাদেশে সুশাসন প্রয়োজন। এই যে বাংলাদেশে সমস্যা হতে যাচ্ছে, এটার থেকে উত্তরণের জন্য একটা সুশাসন দরকার। তার জন্য জবাবদিহিমূলক সরকার দরকার, যার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার—এটা তাদের বক্তব্য। না হলে এই সংকট সহজে যাবে না।

এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে, সেটার সুযোগ এই সরকার কতটা পাবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে সরকার চাপে আছে। চাপটা হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার চাপ। উন্নত বিশ্বে এটা চাপ নয়; কিন্তু আমাদের এখানে অবস্থা এমন যে পরিবর্তনের কথাটা চিন্তা করলে সরকার আতঙ্কিত হচ্ছে। এ কারণে মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য যখন চাপ দেওয়া হয়, তখন তারা মনে করছে এই চাপ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। অর্থনীতিতে সরকারের যে দুর্বলতা তৈরি হয়ে গেছে, এই ক্ষেত্রেও যদি বলা হয়, অর্থনৈতিক সহায়তা করা হবে—যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া হয়। সেই হিসেবে সরকারের ওপর একটা চাপ আসতে পারে। এটার একটা সম্ভাবনা আছে, যার জন্য সামনের নির্বাচনটা একেবারেই সাজানো নির্বাচন করা সহজতর হবে না।