৬টি আসনে উপনির্বাচন

উপনির্বাচন নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল নিয়েছে আ.লীগ 

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উকিল সাত্তারের নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগের নেতারা।

  • বগুড়া-৪ এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে শরিকদের প্রচারণায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ স্বতঃস্ফূর্ত নয়।

উপনির্বাচনে একেক আসনে একেক ধরনের কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একটি আসনে বিএনপির দলছুট প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছে দলটি। দুটি আসন ১৪ দলের দুই শরিক দলকে ছাড় নিয়েছে। নিজেদের প্রার্থী রেখেছে তিনটি আসনে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে কার্যত একধরনের নিয়ন্ত্রণ রাখার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির দলছুট প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে একটি বার্তা দিতে চাইছেন তাঁরা। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়, তখন দলটির যেসব নেতা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তাঁদের ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ।

পাশাপাশি দুটি আসনে জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছাড় দিয়ে শরিকদেরও বার্তা দিচ্ছে যে ১৪ দলকে মূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচনেও ছাড় দিয়ে থাকে। বগুড়া-৪ আসনে জাসদের প্রার্থী এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীকে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। 

উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে একটি বার্তা দিতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

 আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে প্রচারণায় সাত্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির দলছুট প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া শেষ পর্যন্ত গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে। এই উপনির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ২০ দিন পর তিনি মাঠে নামলেন।

আবদুস সাত্তারের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর অনুষ্ঠানটি ছিল গতকাল বেলা ১১টায়। এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিএনপির দলছুট আবদুস সাত্তারের ডান ও বাঁ পাশে বসেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই সভাপতি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় বিএনপির সাবেক সভাপতি। নির্বাচনী এলাকা সরাইল উপজেলায় আবদুস সাত্তারের নিজের প্রতিষ্ঠিত পরমানন্দপুর হাজী মকসুদ আলী নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রচারণার প্রথম এই অনুষ্ঠান ছিল স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আবদুস সাত্তারের সমর্থকেরা তাঁর নির্বাচনী প্রতীক কলার ছড়া নিয়ে মিছিলও করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন, উকিল আবদুস সাত্তারের এই অনুষ্ঠানস্থল এবং এলাকায় তাঁর বাড়িতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।

তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতারা থাকছেন নির্বাচনী প্রচারণায় এবং থাকছেন স্থানীয় বিএনপির সাবেক নেতা-কর্মীরা। তবে স্থানীয় বিএনপির নেতারা নেই আবদুস সাত্তারের পাশে।

 ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জয়ী হয়েছিলেন আবদুস সাত্তার। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে তিনিসহ বিএনপির সাতজন সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন গত ডিসেম্বরে।

এই পদত্যাগের কারণে শূন্য আসনে উপনির্বাচনে আবদুস সাত্তার তাঁর আসনে আবার প্রার্থী হয়েছেন। সে জন্য তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। বিএনপিও তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে।

গতকাল এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর অনুষ্ঠানে আবদুস সাত্তার বলেছেন, ‘পরিস্থিতির কারণে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছি। পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন করছি।’

 এখন সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনে আবদুস সাত্তারসহ চারজন প্রার্থী রয়েছে। আবদুস সাত্তার ছাড়া বাকি তিনজনের এলাকায় তেমন পরিচিতি নেই। 

সেখানে আওয়ামী লীগ থেকে তিনজন প্রার্থী হয়ে দলের নির্দেশে গত শনিবার তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। সর্বশেষ গত বুধবার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন জাতীয় পার্টির দুবারের সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। তিনি সরে দাঁড়ানোর পরদিনই গতকাল উকিল আবদুস সাত্তার এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।

এই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারি লোকজনও যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

একা রেজাউল, মাঠে নেই ‘ভোটের সঙ্গী’ আ.লীগ

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) সমর্থন দেওয়ায় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম (তানসেন) এবার মশাল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তবে এখনো মশালের সঙ্গে মাঠে দেখা যায়নি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। জাসদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রেজাউল করিম বুধবার নন্দীগ্রাম উপজেলায় মশাল প্রতীকের প্রচারণায় অংশ নেন। সেই প্রচারণায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কেউ ছিলেন না। 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১৪-দলীয় জোটের প্রার্থী রেজাউল করিমকে দলীয়ভাবে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে এবং তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত করতে নির্বাচনে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মঙ্গলবার বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে চিঠি দিয়েছেন। তবে দলের কেন্দ্রের সেই নির্দেশের পরও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে নামছেন না। 

শরিক দলের প্রার্থীর পক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত নয় আওয়ামী লীগ

রানীশংকৈল-পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের উপনির্বাচনে ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখানে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী। তিনি এবার হাতুড়ি প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ইয়াসিন আলীর অভিযোগ, ১৪ দলের প্রার্থী হলেও তিনি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাচ্ছেন না।

যদিও এই আসনেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেখানে শরিক প্রার্থীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতাদের চিঠি দিয়েছেন।


 [প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়াব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও]