এত বহিষ্কার, তবু উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির নেতারা 

বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের অধিকাংশই ভোটের মাঠেও নানা কারণে স্বস্তিতে নেই। এরপরও তাঁরা থাকছেন ভোটে।

একের পর এক বহিষ্কার করার পরও উপজেলা ভোটের মাঠ থেকে সরানো যাচ্ছে না বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটি এ পর্যন্ত ১৯২ নেতাকে বহিষ্কার করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে শেষ পর্যন্ত বহিষ্কারের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাবে। এত তৃণমূল নেতার বহিষ্কারের ঘটনা এবং এর পরিণতি কী হতে পারে, এ নিয়েও দলে নানা আলোচনা আছে।

এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চার ধাপে হবে। এর মধ্যে তিন ধাপের নির্বাচনে ১৯২ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। চতুর্থ ধাপের প্রার্থিতা এখনো বাকি রয়েছে।

তবে প্রথম ধাপের নির্বাচনের পর বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের ধারণা ছিল, এ ধাপে বহিষ্কৃত নেতাদের অধিকাংশই ভোটে পরাজিত হওয়ার কারণে পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোতে অনেকে ভোটে থাকবেন না। কিন্তু সে রকম কিছু হয়নি। যদিও প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে দলীয় নেতাদের প্রার্থী হওয়ার সংখ্যা তুলনামূলক কিছুটা কমেছে। বিএনপির নেতারা সেটাকে সন্তোষজনক মনে করছেন না।

■ এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চার ধাপে হবে। চতুর্থ ধাপের প্রার্থিতা এখনো বাকি।

■ তিন ধাপের নির্বাচনে ১৯২ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। 

এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, নির্বাচনে এমন অনেক প্রার্থী থাকেন, যাঁরা জানেন, ভোটে জিততে পারবেন না। তবু তাঁরা নির্বাচন করেন। তাঁদের মতে, এই প্রার্থিতার দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে, নির্বাচন এলেই অনেকে ভোটে দাঁড়াতে চান। তাঁদের কাছে জয় মুখ্য নয়, প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিই বড়। অন্য দিকটি হচ্ছে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে অনেকে প্রার্থী হন ব্যক্তিগত স্বার্থে। এখানে সরকারের প্রলোভন থাকে, ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। বিএনপির নেতৃত্ব মনে করছেন, এই দুই শ্রেণির নেতাদের কারণে দল লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষ বিচারে তাঁরা দলের খুব কাজে আসে না। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হবেন, তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হবেন। এতে দলের কী লাভ?

তবে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, এমন অনেকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, তাঁরা এলাকায় জনপ্রিয়। জনগণের চাহিদা পূরণে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কারের খড়্গকেও তাঁরা খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না। তাঁদের একজন ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হামিদা চৌধুরী। তিনি উপজেলা মহিলা দলের সাবেক সভাপতি।

হামিদা চৌধুরী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দুবার উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম, তিনবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলাম। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কই আমাকে নির্বাচনে টেনে আনে।’

একই রকম বক্তব্য সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবুল কাশেমের। তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাকে চায় (চেয়ারম্যান হিসেবে)। সে বিশ্বাস থেকেই নির্বাচন করছি।’

এবার উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করতে বিএনপি দলীয়ভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে দলের নেতাদের নির্বাচন থেকে ফেরানোর চেষ্টা অন্যতম। এ লক্ষ্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া নেতাদের বোঝানোর। একই সঙ্গে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নেতাদের কাছে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির একটি চিঠিও পাঠানো হয়। এতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর এখন উপজেলা নির্বাচনও কেন বিএনপি বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি এই নির্বাচন বর্জনে জনগণকেও আহ্বান জানাচ্ছে দলটি। এসব পদক্ষেপ উপেক্ষা করে দলের যাঁরা নির্বাচন করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, প্রথম ধাপের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় মোট ৮০ জনকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ৬১ জনকে, সর্বশেষ তৃতীয় ধাপের ৫১ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

দ্বিতীয় ধাপে বহিষ্কার হওয়া ৬১ জনের তালিকার একজন বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম। তাঁর মতে, যাঁরা বহিষ্কার হয়েছেন, তাঁরা দলের অভ্যন্তরীণ ‘গুঁতাগুঁতিতে’ হয়েছেন। যেখানে দলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই, সেখানে বহিষ্কার হয়নি। দল তাঁকে বহিষ্কার করেছে, তা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। তিনি ভালোভাবেই নির্বাচন করছেন।

বিএনপির হিসাবে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে বহিষ্কৃত ৬১ জনের মধ্যে ২৬ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশই ভোটের মাঠেও নানা কারণে স্বস্তিতে নেই। এরপরও তাঁরা থাকছেন ভোটে।