৪৩ দিন পর জমায়েতের কর্মসূচি বিএনপির

মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে আবার দলের নেতা-কর্মীদের মাঠের জমায়েতে ফিরিয়ে আনাই বিএনপির লক্ষ্য।

বিএনপি
বিএনপি

আগামীকাল রোববার ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা সদরে গুম-খুন হওয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করবে বিএনপি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল ও জোটও একই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।  সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে এবারের মানববন্ধন কর্মসূচিকে বিএনপি একটু ভিন্নভাবে দেখছে বর্তমান পরিস্থিতিসহ নানা বিবেচনায়।

আগামীকাল বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন হবে।  গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীদের রাজপথে জড়ো করার লক্ষ্যে দলটির ঘোষিত প্রথম কর্মসূচি এটি। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং তফসিল বাতিলের দাবিতে ২৯ অক্টোবর থেকে ১০ দফায় ২০ দিন অবরোধ এবং তিন দফা চার দিন হরতাল কর্মসূচি করেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোট।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১০ ডিসেম্বর এবারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।  মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে ৪৩ দিন পর আবার দলের নেতা-কর্মীদের মাঠের জমায়েতে ফিরিয়ে আনাই বিএনপির লক্ষ্য। এর মাধ্যমে সরকার ও পুলিশের আচরণ কী হয়, সেটিও দেখা। এর ভিত্তিতেই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীদের রাজপথে জড়ো করার লক্ষ্যে দলটির ঘোষিত প্রথম কর্মসূচি এটি।

বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতাদের অনেকে মনে করছেন, যে নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রধান দলগুলো অংশ নিচ্ছে না, সে ধরনের ‘একতরফা’ নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। এসব রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে এবারের মানবাধিকার দিবসের মানববন্ধন কর্মসূচিটি বিএনপিসহ বিরোধীদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের স্বজনদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

সব বাধাবিপত্তি প্রতিহত করে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে এই মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে নির্যাতনের শিকার, গুম- খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধনে উপস্থিত থাকবেন। তিনি আরও বলেন, শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরা নন, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং প্রতিবাদমুখর লোকজনও সরকারের নির্যাতন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন।

শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরা নন, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং প্রতিবাদমুখর লোকজনও সরকারের নির্যাতন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন।
রুহুল কবির রিজভী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি

মানবাধিকার দিবসে বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। মানববন্ধন ও আলোচনা সভা করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীও। তবে দলটি কোথায় এ কর্মসূচি করবে, তা গণমাধ্যমকে জানায়নি।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘোষিত কর্মসূচি করবেন।

ইতিমধ্যে মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য এসেছে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত। গতকাল ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তাঁদের কোনো উদ্বেগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধান মেনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটা শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে নিষেধাজ্ঞা আসবে কেন?’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা এলে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনে গতি বাড়বে। আর কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা না এলে আন্দোলন নেতিবাচক মোড় নিতে পারে।

প্রতিবছরই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটি। গত ২৫ মে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধা দিলে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ভিসা নীতি কার্যকর করার কথাও জানায় দেশটি।

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারি দল থেকেই নানান কথা বলা হচ্ছে। এটা উদ্দেশ্যপূর্ণ। আমরা গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য রাস্তায় আন্দোলন করছি। কোনো দেশের নিষেধাজ্ঞার জন্য আন্দোলন করছি না।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা এলে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনে গতি বাড়বে। আর কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা না এলে আন্দোলন নেতিবাচক মোড় নিতে পারে। এ ধরনের একটা আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

তবে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারি দল থেকেই নানান কথা বলা হচ্ছে। এটা উদ্দেশ্যপূর্ণ। আমরা গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য রাস্তায় আন্দোলন করছি। কোনো দেশের নিষেধাজ্ঞার জন্য আন্দোলন করছি না।’