আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা এত সোজা নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটা সরকার ইচ্ছা করলেই যে জনগণের উন্নয়ন করতে পারে, আওয়ামী লীগ সেটা প্রমাণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতই সোজা (আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা), আওয়ামী লীগ পারে। আইয়ুব খানকে উৎখাত করেছি; ইয়াহিয়া খানকে যুদ্ধে পরাজিত করে উৎখাত করেছি; জিয়া যেখানেই গেছে, আন্দোলন তার বিরুদ্ধে হয়েছে; এরশাদকে উৎখাত করেছি; খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট চুরির পর তাকে উৎখাত করা হয়েছে, আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিল, সেটাও বাতিল হয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগ পারে। আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা এত সোজা নয়।’
আজ রোববার সকালে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির সঙ্গে কয়েকটি বামপন্থী দলের যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসব বামপন্থী দলের নীতি আর আদর্শ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতসহ আরও কিছু পার্টি মিলে দাঁড়াল। কিন্তু আরেকটি জিনিস খুব অবাক লাগে—কোথায় লেফটিস্ট (বামপন্থী) আর কোথায় রাইটিস্ট (ডানপন্থী)। যারা লেফটিস্ট, তারা মনে হলো ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। অর্থাৎ সেই জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে আমাদের বাম, অতি বাম, স্বল্প বাম, তীব্র বাম, কঠিন বাম—সব যেন এক হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে।’ তিনি বলেন, ‘সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এ দেশ! সে কথাই মনে হয়, কোথায় তাদের নীতি আর আদর্শ, কোথায় কী!’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কী কারণে যারা হত্যাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হত্যার বিচারের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, মানি লন্ডারিংয়ে সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করে যে দলের প্রধান সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাদের নেতৃত্বে এত বড় বড় তাত্ত্বিক, এত বড় বড় কথা বলে, এত কিছু করে তারা এক হয়ে যায় কীভাবে। কীভাবে এক হয়ে যায়, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুর্নবাসন করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই দলে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে? আর ১০ ডিসেম্বর যেদিন আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা শুরু করল। ১৪ তারিখ পর্যন্ত সমানে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করল। কোনো জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবী থাকবে না। দেশটা দাঁড়াতে পারবে না, সেটাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের সমর্থন করে কীভাবে? এটা ভাবলে আমার অবাক লাগে। এরা তো ইতিহাস জানে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয় আমরা এনেছি, এই বিজয়ের পতাকা সমুন্নত করেই চলতে হবে। আবার যেন ওই খুনি, যুদ্ধাপরাধী, যাদের আমরা বিচার করেছি; তারা ক্ষমতায় এসে এই দেশকে ধ্বংস করতে না পারে। সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে ও লক্ষ্য রাখতে হবে।’
‘দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কিন্তু সেই ক্ষমতায় আসাটা অত্যন্ত দুরূহ ছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই জনগণ উপলব্ধি করতে পেরেছে যে সরকার আসলে জনগণের সেবক এবং একটা সরকার ইচ্ছা করলেই যে জনগণের উন্নয়ন করতে পারে, আওয়ামী লীগ সেটা প্রমাণ করেছে।
আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী, প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় বসে নিজে খাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ তো দেশের মানুষকে খাওয়াচ্ছে। দেশে গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ঘর দিচ্ছি। রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সংবিধানে বর্ণিত মানুষের প্রতিটি মৌলিক চাহিদা আমরা পূরণ করে যাচ্ছি।’
আমদানি ব্যয় বাড়ায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক জিনিস আমদানি করতে হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। সে জন্য দামও বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী তেলের মূল্য ও গ্যাসের মূল বেড়ে গেছে। বিশ্বে দাম বাড়লে আমাদের কী করার আছে।’
বিদ্যুতের দাম উৎপাদনের খরচ অনুযায়ী দিতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুৎ-গ্যাস দেওয়া আর সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে খরচ হয়, তা সবাইকে দিতে হবে। গ্যাস উৎপাদনে আমাদের যে টাকা খরচ হয় এবং পরিবহন খরচ হয়, তা সবাইকে দিতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত দিন আমাদের অর্থ ছিল, আমরা ভর্তুকি দিয়েছি। কিন্তু করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অবরোধের ফলে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিয়েছে, তাতে আমরাও আক্রান্ত। সুতরাং এত দিন বিদ্যুৎ ও গ্যাসে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, সেই ভর্তুকির টাকা এখন আপনাদের দিতে হবে।’
কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি তিনি সবাইকে সঞ্চয়ী ও সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের আগাম সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে সংকটের পরিস্থিতিতে না পড়ি। সে জন্য জমিতে বাগানে বা ছাদে হলেও কিছু উৎপাদন করেন।’
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সূচনা বক্তব্য দেন। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু; সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, সিমিন হোসেন; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ; মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস প্রমুখ।