রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল রাতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়েছেন কিছু ব্যক্তি
রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল রাতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়েছেন কিছু ব্যক্তি

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, আগুন

রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’র ব্যানারে একদল লোক একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর তাঁদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ওই কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।

আগুনে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের নিচতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আসবাবসহ অন্যান্য সামগ্রী। কার্যালয়ের দেয়ালে থাকা জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ম্যুরাল ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টি দাবি করেছে, তাদের ওপর আগে হামলা হয়েছে। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে যাওয়া ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, তাঁদের ওপর আগে হামলা করেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।

বিজয়নগরে মিছিলটি যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতার ব্যানারে ‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অপতৎপরতা ও দেশবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে’ মশালমিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক রাত আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আগামী শনিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সমাবেশ করতে পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছেন। গতকাল দলের নেতা-কর্মীরা সমাবেশের প্রস্তুতি সভার জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যার পর একটি মশালমিছিল নিয়ে একদল লোক তাঁদের কার্যালয়ে হামলা করেন। জাতীয় পার্টির কর্মীদের প্রতিরোধে হামলাকারীরা মার খেয়ে পালিয়ে যায়। আধা ঘণ্টা পর সংঘবদ্ধ হয়ে ফিরে তারা কার্যালয়ে আগুন দেয়।

মুজিবুল হক বলেন, আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস এসেছিল। তাদের আগুন নেভাতে দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে যদি একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলা হয়, তাহলে দেশে কিসের গণতন্ত্র, কিসের রাজনীতি।’

রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার রাতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়েছেন একদল ব্যক্তি

ঘটনা সম্পর্কে নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের নেতা হাসান আল মামুন রাতে ঘটনাস্থলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহবাগে সমাবেশ শেষ করে আমরা বিজয়নগরে আসি। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।’

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সন্ধ্যা সাতটার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, ‘জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’ এর কিছুক্ষণ পর হাসনাত আবদুল্লাহ আরেকটি পোস্টে লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত সাড়ে আটটায় মিছিল নিয়ে তাঁরা বিজয়নগরে যাবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা সারজিস আলম সাড়ে সাতটার দিকে ফেসবুকে একই রকম একটি পোস্ট দেন। তিনি লিখেছেন, ‘রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে আমরা বিজয়নগরে যাচ্ছি।’ পরে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল বিজয়নগরের উদ্দেশ্যে বের হয়।

এর আগে রাত সোয়া আটটার পর বিজয়নগরে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের নিচতলায় আগুন দেওয়া হয়েছিল। তা নিভিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তখনো ভাঙচুর চলছিল।

পরে রাত ৯টার দিকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য ও সেনাসদস্য জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে আসেন। তাঁরা হামলাকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রিফাত রশিদ ও মাহিন সরকার। এ সময় রিফাত রশিদ বলেন, ফ্যাসিবাদের সহযোগী জাতীয় পার্টিকে কোনোভাবেই ২ নভেম্বরের সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। আর ছাত্র–জনতার ওপর হামলার ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন ধীরে ধীরে চলে যেতে থাকেন। ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনী চলে যায়। সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি।

জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে অভিহিত করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। দলটিকে সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তখন জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারা বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলই অংশ নিয়েছিল।